টিকার হাত ধরে মানুষ একদিকে করোনামুক্তির স্বপ্ন দেখলেও বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে মারা গেছেন সাড়ে ২০ লাখের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন ৯ কোটি ৩৫ লাখের বেশি মানুষ। এ ছাড়া, সুস্থ হয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ।

মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের শুক্রবার সকাল ৮টার তথ্য বলছে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ লাখ ১ হাজার ২৮৯ জন। ১৩ জানুয়ারি একই সময়ের দিকে এই সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৩০ জন। 

ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৩৫ জন। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ৮৯০ জন। 

করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন দুই কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪১০ জন এবং মারা গেছেন তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৪ জন। এ ছাড়া, সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৪১ লাখ ১২ হাজার ১১৯ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ লাখ ২৬ হাজার ১১৫ জন, মারা গেছেন দুই লাখ ৭ হাজার ১৬০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৭৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৩ জন।  

সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় ও মৃত্যুর দিক থেকে তৃতীয়তে থাকা ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৫০৮ জন, মারা গেছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ১ লাখ ৬২ হাজার ৮২ জন।  

মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থতে রয়েছে মেক্সিকো। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৬ হাজার ৯১৭ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৭১ হাজার ৯০১ জন। এ ছাড়া, সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৮ জন। 

ওয়ার্ল্ডোমিটারে তালিকায় তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। যুক্তরাজ্য পঞ্চম। ফ্রান্স ষষ্ঠ। তুরস্ক সপ্তম। ইতালি অষ্টম। স্পেন নবম। জার্মানি দশম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও এক ধাপ নিচে নেমেছ, এখন দাঁড়িয়েছে ২৮তম। 

গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচ লাখ সাত হাজার ২৬৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মারা গেছেন সাত হাজার ৩৯৮ জন। আর সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৪৮ হাজার ৮০৩ জন।  

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যে ১০ দেশ

দেশ আক্রান্ত মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্র ২,৩৮,৪৮,৪১০ ৩,৯৭,৯৯৪
ভারত ১,০৫,২৮,৫০৮ ১,৫১,৯৫৪
ব্রাজিল ৮৩,২৬,১১৫ ২,০৭,১৬০
রাশিয়া ৩৪,৯৫,৮১৬ ৬৩,৯৪০
যুক্তরাজ্য ৩২,৬০,২৫৮ ৮৬,০১৫
ফ্রান্স ২৮,৫১,৬৭০ ৬৯,৩১৩
তুরস্ক ২৩,৬৪,৮০১ ২৩,৪৯৫
ইতালি ২৩,৩৬,২৭৯ ৮০,৮৪৮
স্পেন ২২,১১,৯৬৭ ৫৩,০৭৯
জার্মানি ২০,০৩,৯৮৫ ৪৫,৪৯২

সূত্র : ওয়ার্ল্ডোমিটার

বাংলাদেশ পরিস্থিতি 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সর্বশেষ যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৮৪৯ জনে। নতুন করে ৮৪৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ২৫ হাজার ৭২৩ জনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে।  

আগের দিন ১৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর।  

দ্রুততম সময়ের মাঝে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের টিকার প্রয়োগ চলছে কয়েকটি দেশে। বাংলাদেশের সরকার বলছে, চলতি মাসের মধ্যেই ভ্যাকসিন চলে আসবে বাংলাদেশে। আর বিতরণ শুরু হয়ে যাবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই। টিকা নিতে দেশগুলোর মধ্যে চলছে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। তবে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে যে টিকাগুলো অনুমোদন পেয়েছে সেখানে টিকা সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নিতে বলা হচ্ছে। যেমন- কোন কোন সমস্যা থাকলে টিকা নেওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে? আর টিকাগুলোর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই বা কী? 

ভ্যাকসিন নিয়ে কী বলছে বাংলাদেশ 
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান
• ২৫-২৬ জানুয়ারি দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম লট আসছে
• ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ৪২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে
• ভ্যাকসিন নিতে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে, সেখানেই জানানো হবে পরবর্তী করণীয় 
• প্রতিটি জেলায় ৭ লাখ ডোজের বেশি ভ্যাকসিন রাখা যাবে
• প্রাইভেট সেক্টরও ভ্যাকসিন আনতে পারবে; সে বিষয়ে নীতিমালা হচ্ছে 
• ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে

আট মাস পর করোনায় মৃত্যু চীনে
চীনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ মৃত্যুর প্রায় আট মাস পর মারা গেছেন আরও একজন করোনা রোগী। ১৪ জানুয়ারি চীনের হেবেই প্রদেশে এই ঘটনা ঘটেছে। কাকতালীয়ভাবে একই দিনে করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে চীনে পৌঁছেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদল।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে চীনে প্রথম মৃত্যু হয়েছিল গতবছর ১১ জানুয়ারি। চীনের পাশাপাশি বিশ্বেও করোনায় প্রথম মৃত্যু ছিল সেটি। এরপর গতবছর মে মাসে চীনে সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দেশটির সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চীনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৪ হাজার ৬৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে চীনের যে কয়েকটি অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ বেশি, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হেবেই প্রদেশ। সেখানকার রাজধানী শিজিয়াঝুয়াংকে বর্তমানে করোনার নতুন কেন্দ্রস্থল বা এপিসেন্টার বলে মত দিয়েছেন চীনের বিজ্ঞানী ও জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনার নতুন আরও একটি ধরন
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের নতুন আরও একটি ধরন খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। দেশটির ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি আবিষ্কার করেন। এদিকে মঙ্গলবারও দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক চার হাজার ৩০০ মানুষ মারা গেছেন। অন্যদিকে করোনার টিকাদান কর্মসূচির গতি ক্রমেই বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার দেশটির প্রায় ১০ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হয়।

ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে মার্কিন স্বাস্থ্য সংকট যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে, ঠিক এমন মুহূর্তে মহামারি করোনায় শীর্ষ বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবার চব্বিশ ঘণ্টায় চার হাজারের বেশে মানুষের প্রাণহানি ঘটল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ বলছে, ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের আবিষ্কৃত করোনার ওই নতুন ধরনটি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া ধরন থেকে রূপান্তরিত হয়েছে।

২৭ কোটি ডোজ করোনা টিকা কিনছে আফ্রিকা
আফ্রিকা মহাদেশভুক্ত দেশগুলোর অধিবাসীদের জন্য চলতি বছর ২৭ কোটি ডোজ ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনা হবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনের মাধ্যমে টিকার ডোজগুলো কেনা হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন আফ্রিকার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা।  

টিকার ডোজ কেনার পর ইউনিয়নভূক্ত সবগুলো দেশে সমভাবে সেগুলো বন্টণ করা হবে নিশ্চিত করে বিবৃতিতে রামাপোসা বলেন, ‘শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইউনিয়নের দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগীতা ও ও সামষ্টিক প্রচেষ্টার ভিত্তিতে এই মহামারি মোকাবিলা করে আসছে। এ কারণে টিকা বিতরণের সময় কোনও দেশ যেন পেছনে পড়ে না থাকে সেদিকে মনযোগ রাখবে এইউ।’

টিকা ক্রয়ের জন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে ইতোমধ্যে ‘আফ্রিকান ভ্যাকসিন অ্যাকুইজিশন টাস্ক টিম’ নামে একটি কমিটি এইউ এর উদ্যেগে করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

স্কুল খুলে দিচ্ছে দিল্লি
করোনাভাইরাস মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল শর্ত সাপেক্ষে পুনরায় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার। দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লির সব স্কুল দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী সোমবার থেকে পুনরায় খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

আগামী ৪ মে থেকে কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের (সিবিএসই) পরীক্ষা শুরুর আগে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল খোলার এই নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী মনিশ সিসোদিয়া। তিনি বলেছেন, পিতামাতা অনুমতি দিলে শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারবে। তবে স্কুলে আসার জন্য তাদের বাধ্য করা হবে না। 

তিনি বলেন, আগামী ১৮ জানুয়ারি থেকে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক, প্রকল্প এবং কাউন্সেলিংয়ের জন্য স্কুল খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

দিল্লির সরকার বলছে, স্কুলে যে শিক্ষার্থীরা আসবে তাদের রেকর্ড সংরক্ষণ করবে কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হবে না। বিশেষ করে বোর্ড পরীক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের এই উপস্থিতি জরুরি নয়।

এনএফ