যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গার তিন দিন আগে এ হামলার বিষয়ে দেশটির পুলিশ বিভাগকে সতর্ক করে প্রতিবেদন দিয়েছিল ক্যাপিটল পুলিশের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগ।

৩ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশ বরাবর ১২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনটি জমা দেয় ক্যাপিটল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ; সেখানে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের উস্কানি এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ও উগ্র ডানপন্থী গ্রুপগুলোর সমর্থনপুষ্ট  কয়েক হাজার ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থক মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের অধিবেশনকে লক্ষ্য করে ক্যাপিটলে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন সংবাদ তারা পেয়েছেন।

কংগ্রেসের সদস্যরা হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা মনে করছেন, ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের অধিবেশন পণ্ড করাই এখন নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের শেষ উপায় হিসেবে অবশিষ্ট রয়েছে তাদের সামনে।’

‘এই বেপরোয়া মনোভাব এবং গভীর হতাশা যে কোনো সময় তাদের আক্রমনাত্মক করে তুলতে পারে। আগের প্রতিবাদগুলোতে ট্রাম্পের সমর্থকরা তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ডেমোক্র‌্যাট সমর্থকদের বিবেচনা করতেন, কিন্তু এবার তারা তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করছেন খোদ কংগ্রেসকে।’

৬ তারিখে সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি হিসেবে ট্রাম্পের সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, গ্যাসমাস্ক ইত্যাদি জোগাড় করছেন- এই তথ্যও জানানো হয়েছে ৩ জানুয়ারির প্রতিবেদনে।

তবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে দেশের অন্য কোনো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে জানায়টি যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ; এমনকি এফবিআইকেও নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের হাতে কোনো প্রতিবেদন পৌঁছায় নি। এ রকম একটি প্রতিবেদন যে করা হয়েছে, সে তথ্যও আমাদের জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ।’

এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ বিভাগকে প্রশ্ন করা হলে বিভাগের কোনো মুখপাত্র কথা বলতে রাজি হননি। ক্যাপিটল পুলিশের মুখপাত্র ইভা ম্যালেকির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ওয়াশিংটন পুলিশ বিভাগ ও ইভা ম্যালেকিকে সমর্থন করে দাঙ্গার পর পদত্যাগ করা ক্যাপিটল পুলিশের সাবে প্রধান স্টিভেন সুন্ড ওয়াশিংটন পোস্টকে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চাকরিরত অবস্থায় অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করার নিয়ম নেই- এ কারণেই তারা কেউ কথা বলতে চাননি।

তবে ৩ তারিখ ওই প্রতিবেদন জমা পড়ার পর যা ঘটেছিল, সাক্ষাৎকারে তা বলেছেন দাঙ্গার পর পদত্যাগ করা ক্যাপিটল পুলিশের সাবেক এই প্রধান।

তিনি বলেন, ‘৩ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদন আমার ডেস্কে আসার পরপরই এ ব্যাপারে কংগ্রেসের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অবহিত করেছিলাম আমি। ৬ তারিখ অধিবেশনের দিন ক্যাপিটল পুলিশকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ বিভাগের সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা সংস্থা থেকেও যেন ক্যাপিটলে কর্মী পাঠানো হয় এজন্য তাদেরকে তৎপর হওয়ার অনুরোধও জানিয়েছিলাম।’

‘কিন্তু তারা আমার কথা বিশ্বাস করেননি। উল্টো প্রতিবেদনের তথ্য সঠিক নয় বলে তিরস্কার করেছিলেন আমাকে’- খেদ প্রকাশ করে বলেন স্টিভেন সুন্ড।

গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, ঠিক তখনই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন।

সেদিন দিনের শুরুতে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ‘আমেরিকা বাঁচাও’ নামক একটি গণজমায়েতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।

এরপরই সমাবেশের একটু দূরে কয়েকশ' ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন ট্রাম্প সমর্থকরা। এ সময় তাদের অধিকাংশের হাতে ছিল ট্রাম্পের পতাকা।

ট্রাম্পের সমর্থক ও হামলাকরীদের সংঘাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো ১৩ জন।