আক্রান্তের চেয়ে বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন যুক্তরাজ্যে
২০১৯ সালের একেবারের শেষলগ্নে এসে প্রাণঘাতী নতুন এক ভাইরাসের মুখোমুখি হয় বিশ্ব। বছর পেরিয়ে সেই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা এখন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬০১ জন। ভাইরাস মোকাবিলার এ পর্বে এসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন চলছে টিকাদান কর্মসূচি। মূলত টিকার হাত ধরেই করোনামুক্তির পথে হাঁটছে বিশ্বে।
বিশ্বের যেসব দেশ এরই মধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাজ্য। এরইমধ্যে দেশটিতে ৩৫ লাখের বেশি মানুষকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দেশটিতে এখন পর্যন্ত যত মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তার চেয়ে বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের সরকারি হিসাব অনুযায়ী শুক্রবার পর্যন্ত ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৭৯ জনকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আবার ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৬১ জন দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রধান রোববার বিবিসিকেক বলেছেন, ৮০ বছর তার চেয়ে বেশি বয়সীদের অর্ধেকের বেশিকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে টিকাপ্রদানের এই গতি আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমরা কিছু হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা টেস্ট কার্যক্রম শুরু করবো। এখন আমরা প্রতিমিনিটে ১৪০ জনকে টিকা দিতে পারছি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
করোনা আক্রান্ত হয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে। মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮৯ হাজার ২৬১ জন। সিএনএন।
বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ২০ লাখ ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছে
এদিকে বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ২০ লাখ ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে, সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন ২০ লাখ ৩৯ হাজার হাজার ৬০১ জন। একই সময় নাগাদ বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯ কোটি ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬২ জন। ১৫ জানুয়ারি একই সময়ের দিকে মৃতের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ১ হাজার ২৮৯ জন
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৫০ জন। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৪ লাখ ৭ হাজার ২০২ জন।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬৭২ জন। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৬ জন। .
ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। ব্রাজিলে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯ জন। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৮৬৮ জন।
তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। যুক্তরাজ্য পঞ্চম। ফ্রান্স ষষ্ঠ। তুরস্ক সপ্তম। ইতালি অষ্টম। স্পেন নবম। জার্মানি দশম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার সর্বশেষ যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৯০৬ জনে। নতুন করে ৫৬৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ২৭ হাজার ৬৩২ জনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে।
আগের দিন ২১ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
দেশে গ্লোব বায়োটেকের টিকার ট্রায়ালের আবেদন
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক তাদের উৎপাদিত করোনাভাইরাস টিকা মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। রোববার বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের কাছে এই আবেদন করা হয়। বলা হচ্ছে, অনুমোদন পাওয়ার পরের সাত থেকে দশদিনের মধ্যে ঢাকার কোনো একটি বেসরকারি হাসপাতালে শখানেক স্বেচ্ছাসেবকের ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হবে ট্রায়ালের জন্য। এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই ট্রায়ালের দায়িত্বে থাকছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হলে সাধারণত তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে করতে হয়।
সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে ভারতে
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিতে কাউকে স্বাক্ষর করতে না হলেও ভারতের স্থানীয় টিকা উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহীদের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে।
একনজরে ভারতের টিকাদান কর্মসূচি
• সারা দেশের ৩ হাজার ৬টি কেন্দ্রে একই সঙ্গে টিকাদান শুরু হয়েছে
• দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ভারত করোনার টিকাদান শুরু করলো
• ইতিহাসে এত বড় টিকাদান কর্মসূচি এই প্রথম, বলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী
• প্রথম দফায় চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স চালক, স্বাস্থ্য কর্মী, সাফাই-কর্মীরা টিকা পাবেন
• দ্বিতীয় ধাপে টিকা দেওয়া হবে ৫০ বছরের বেশি বয়স্কদের
• পশ্চিমবঙ্গের মোট ২১২টি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে টিকা-করণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে
মনীষ কুমার নামের এক ব্যক্তিকে দেওয়া মাধ্যমে গেল শনিবার গণহারে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয় ভারতে। টিকা নেওয়ার পর গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বা কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ওই সম্মতিপত্রে। টিকা প্রয়োগের পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসের অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সম্মতিপত্রে।
ফাইজার নিয়ে বিতর্ক
এদিকে ফাইজারের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় নরওয়ের জরুরি পরামর্শ চেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একই সঙ্গে তারা এ বিষয়ে ফাইজারের বক্তব্য চাচ্ছে। ফাইজারের কাছ থেকে এক কোটি ডোজ কেনার চুক্তিও রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। ফলে নরওয়ের ঘটনা তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
নরওয়ের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রক কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সাধারণ জ্বর ও বমি বমি ভাবের মতো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। কিছু দুর্বল রোগীর জন্য এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেন, সরকার ব্যাপক সাবধানতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে টিকাদানের ব্যাপারে আমাদের শিডিউলের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল রেগুলেটর থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করেছি, এ ঘটনার ব্যাপারে তাদের নরওয়ের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ফাইজারের কাছ থেকে বাড়তি তথ্য নিতে বলেছি।’
এনএফ