ক্ষমা ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প
• ট্রাম্পের হাতে সময় আছে মাত্র দুইদিন
• সর্বশেষ পূর্ণদিবস অফিস করবেন মঙ্গলবার
• প্রায় ১০০টি ক্ষমার আদেশ জারির প্রস্তুতি
• তালিকা চূড়ান্ত করতে হোয়াইট হাউসে বৈঠক
• বুধবার দুপুর পর্যন্ত আছে ক্ষমা ঘোষণার সুযোগ
আগামী বুধবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেবেন জো বাইডেন। আর ট্রাম্পের হাতে সময় আছে মাত্র দুইদিন। চূড়ান্ত অফিস করবেন মঙ্গলবার (১৯ তারিখ)। তবে এই সময়ের মধ্যে প্রায় ১০০টি ক্ষমার আদেশ জারির প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে দণ্ড মওকুফ, বিচার থেকে দায়মুক্তিসহ দণ্ড কমানোর আদেশ রয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত তিন ব্যক্তির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
তবে সেই তালিকায় ট্রাম্প এখনও নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেননি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
বিজ্ঞাপন
দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, ক্ষমা ঘোষণার এই তালিকায় কারা থাকবেন, আর কারা থাকবেন না সেটা চূড়ান্ত করতে রোববার (১৭ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউসে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, হোয়াইট হাউস থেকে বিদায়ের আগে ক্ষমা ঘোষণা করা হবে; বড়দিনের উৎসব পর্যন্ত এ নীতি ধরেই এগোচ্ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও সহিংসতার পর এই কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। সেদিনের ওই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, কংগ্রেসে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনার দিনসহ আগের দিনগুলোতে ট্রাম্প একা একাই কেবল সেদিকে নজর রাখছিলেন। এর ফলে ক্ষমার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন ট্রাম্প।
কিন্তু ৬ জানুয়ারির ঘটনার পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠলে ক্ষমা ঘোষণার কাজ থেকে পিছু হটেন তিনি।
প্রাথমিক ভাবে দুই ধাপে দুটি গ্রুপকে ক্ষমা ঘোষণার বিষয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। যার প্রথমটা করার কথা ছিল গত সপ্তাহের শেষ নাগাদ এবং দ্বিতীয়টি ট্রাম্পের শেষ কর্মদিবস অর্থ্যাৎ মঙ্গলবার।
এখন যদি ট্রাম্প নিজেকে, বা নিজের পরিবারের কাউকে বা বিতর্কিত কোনো সহযোগেীকে শেষ মুহূর্তে ক্ষমা ঘোষণা না করেন, তাহলে বিদায়ী এই প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবারই যে তালিকা প্রকাশ করবেন তা হবে ক্ষমার সর্বশেষ তালিকা।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পর্যন্ত ৯৪ জন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হয় মুক্তি দিয়েছেন, না হয় সাজা কমিয়ে দিয়েছেন।
আগামী ১৯ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ পূর্ণ কর্মদিবস। আর পরদিন ২০ জানুয়ারি দুপুরে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। এর আগপর্যন্ত সাধারণ ক্ষমাপত্রে ম্বাক্ষর করতে পারবেন ট্রাম্প।
এর আগেও ক্ষমা করেছেন ট্রাম্প। নিজের রাজনৈতিক সহযোগী ও বন্ধুদের ধারাবাহিকভাবে ক্ষমা করার পর ২০১৮ সালে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘নিজেকে ক্ষমা করার চূড়ান্ত ক্ষমতা আমার রয়েছে।’
অবশ্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের মামলা রয়েছে। সেগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার আওতায় পড়ে না। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি সাইরাস ভেন্স-এর ক্রিমিনাল তদন্ত এবং নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের নাগরিক তদন্ত।
ঋণ নিতে সম্পদের মূল্য বেশি দেখানো এবং বাণিজ্যিক বিনিময়ের সময় ট্যাক্স সুবিধা নেওয়ার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব মামলা চলছে।
মার্কিন আইনজীবীরা বলছেন, একজন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কিনা এর সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। অতীতে কোনো প্রেসিডেন্টই এই চেষ্টা (নিজেকে ক্ষমা করার চেষ্টা) করেননি। সেকারণে আদালত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের প্রফেসর ব্রায়ান কাল্ট বলেন, ‘মানুষ যখন আমার কাছে জানতে চায় একজন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারে কিনা, আমার উত্তর- সবসময়ই পারে।’
তিনি বলেন, সংবিধান এই বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলেনি।
তবে কোনও কোনও আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন নিজেকে ক্ষমা করা অসাংবিধানিক হবে। কেননা তা নিজের মামলায় কেউ বিচার করতে না পারার মূল নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়েন তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার প্রায় আড়াই শতাব্দী আগে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন; যারা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অংশ নেন।
শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।
এদিকে আগামী বুধবার জো বাইডেনের শপথ গ্রহণকে সামনে রেখে রোববার (১৭ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের স্টেট হাউসগুলোর সামনে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করেছেন ট্রাম্প সমর্থক ও উগ্র ডানপন্থী বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরা।
এসব বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় অল্প হলেও তাদের মধ্যে অনেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
বিবিসি বলছে, টেক্সাস, অরেগন, মিশিগান ও ওহিওসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড়ো হয়ে রোববার বিক্ষোভ করে মানুষ।
এদিকে আগামী বুধবার (২০ জানুয়ারি) নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে হামলা ও সহিংসতার আশঙ্কা থাকায় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনসহ সব অঙ্গরাজ্যের স্টেট হাউসগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
বুধবারের ওই শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ট্রাম্প সমর্থকরা সশস্ত্র বিক্ষোভে নামতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছে এফবিআই।
সূত্র: সিএনএন
টিএম