নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে ওয়াশিংটনের প্রাণকেন্দ্র পরিণত হয়েছে সামরিক দুর্গে। বুধবারের এই অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে ধারাল কাঁটাতারের বেড়া আর ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজারের বেশি সৈন্যের উপস্থিতিতে ওয়াশিংটন এখন ভূতুড়ে নগরী।

অতীতে প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের দিনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হলেও এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান হলেও করোনাভাইরাস মহামারি ইতোমধ্যে সবকিছু বদলে দিয়েছে।

গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের যে সমর্থকরা হামলা চালিয়েছিলেন; বুধবারের অভিষেক অনুষ্ঠানে তাদের সহিংসতার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মল জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় কেউই প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারবেন না; যা ওয়াশিংটনের অনেকের মাঝে হতাশা তৈরি করেছে।

হোয়াইট হাউসের পাশের কংক্রিটের প্রতিবন্ধকতার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ডানা ও’কনার রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি ভূতুড়ে নগরীর মতো; যেখানে শুধুই সৈন্য আর সৈন্য। এটি অকল্পনীয় এক দৃশ্য। যা একেবারে অপ্রাকৃতিক।’

অতীতে প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান ন্যাশনাল মলের দৈত্যাকার টেলিভিশন স্ক্রিনে দেখানো হতো; যেখানে লাখ লাখ দর্শকের সমাগম ঘটতো। তারা ক্যাপিটল হিল থেকে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের পায়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখতেন বিশালাকারের পর্দায়। পুরো শহরের হোটেলের বলরুম এবং কনভেনশন হলগুলো আলোকসজ্জায় ও জমকালো পার্টিতে মুখর থাকে; যেখানে প্রথম সারির তারকাদের উপস্থিতিতে কনসার্ট এবং শ্যাম্পেইনের আসর জমে।

জনমানবশূন্য ভূতুড়ে নগরী ওয়াশিংটন

প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান সাধারণত ব্যাপক-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে প্রধান প্রবেশ পথে তল্লাশি করা হয় দর্শকদের শরীর। নির্দিষ্ট আইডি কার্ড, ন্যাশনাল গার্ডের পাশাপাশি স্থানীয় ও ফেডারেল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন। 

কিন্তু চলতি বছরে যে ধরনের পূর্ব-সতর্কতামূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা একেবারে নজিরবিহীন।

ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বোসার বলেছেন, ক্যাপিটলে প্রাণঘাতী হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা ছাড়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অন্য কোনও উপায় নেই। যেখানে তথাকথিত দেশপ্রেমিকরা সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানো এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যার চেষ্টা চালাতে পারেন।

এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বেড়া দেখতে চাই না। আমাদের সড়কে সশস্ত্র সৈন্যদের কোনোভাবেই দেখতে চাই না। কিন্তু ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে আমাদের এসব করতে হচ্ছে।

যে জাতি বিশ্বজুড়ে নিজেদের গণতন্ত্রের বাতিঘর হিসেবে তুলে ধরে গর্ব করে; তাদের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না।

ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার সেন্টার ফর পলিটিকসের পরিচালক ল্যারি সাবাতো

বিশ্ব দেখবে– এক সামরিক শিবিরের মাঝে বাইডেন শপথগ্রহণ করছেন; যা গ্রিন জোনের কাছেই। ইরাক যুদ্ধের সময় বাগদাদের প্রাণকেন্দ্রে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠিত গ্রিন জোনের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।

১৯৭৩ সালে দ্বিতীয় বারের মতো প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের শপথ থেকে শুরু করে প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবাতো। ১৯৮৫ সালে তীব্র শীতের কারণে একেবারে বদ্ধ ঘরে রোনাল্ড রিগানের শপথ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। তবে এবারে পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না সাবাতো।

এসএস