প্রেসিডেন্সির একেবারে শেষ কয়েক ঘণ্টা কাটাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদায়বেলায় সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন, র‌্যাপার লিল ওয়েইনসহ ৭৩ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া আরও ৭০ জনের শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় ট্রাম্পের পরিবারের কোনো সদস্যের নাম নেই।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে শাস্তি মওকুফ ও কমিয়ে দেওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিলেন।

এদিকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ‘পাগলাটে’ বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা অ্যাডাম স্কিফ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন,‘ট্রাম্পের নিজের সমর্থকদের সঙ্গেই আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও ক্ষমা পেয়েছেন স্টিভ ব্যানন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তৈরির জন্য ট্রাম্প সমর্থকদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করেছিলেন ব্যানন। অথচ এই দেয়াল নির্মাণের টাকা মেক্সিকো দেবে বলে অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প।

বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া ওই বিবৃতিতে ব্যাননকে ক্ষমা করার বিষয়ে বলা হয়, ‘কনজারভেটিভ আন্দোলনের জন্য স্টিভ ব্যানন খুব গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এবং প্রখর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার জন্য তিনি সুপরিচিত।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শেষ মুহূর্তে এসে ব্যাননকে ক্ষমা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার (ব্যানন) সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। এরপরই তাকে ক্ষমা করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

ট্রাম্প অবশ্য নিজেকে বা তার পরিবারের কোনো সদস্যকেও ক্ষমা ঘোষণা করেননি। এমনকি নিজের আইনজীবীকে রুডি গুইলিয়ানিকেও ক্ষমা ঘোষণার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেননি ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ের পর থেকে নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে প্রবল চেষ্টা করেন রুডি। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে জন হেন্ডরেন নামক নিজস্ব প্রতিনিধির বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, ‘নিজেকে বা নিজের পরিবারের কোনো সদস্যকে ক্ষমা ঘোষণা না করতে ট্রাম্পকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কারণ নিজেকে ক্ষমা ঘোষণা করলে দোষী প্রমাণের সুযোগ থেকে যায়।’

‘এমনকি জানুয়ারির ৬ তারিখে ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদেরও ক্ষমা না করতে ট্রাম্পকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে তারা শুনতে পেয়েছেন।’

৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক বলে পরিচিত ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উস্কানিতেই সমর্থকরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপরই প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে ডেমোক্র্যাটরা। হামলায় উস্কানির অভিযোগ অস্বীকার করেও প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের শিকার হয়েছেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন; যারা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অংশ নেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রথমবারের মতো অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় দেশটির পার্লামেন্টের এই নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত অভিশংসন থেকে মুক্তি পান ট্রাম্প।

তবে দ্বিতীয় দফায় প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হওয়ার পর এ বিষয়ে সিনেটে শুনানি এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। সিনেটে তার অভিশংসনের প্রস্তাব পাস হলে ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে পারবেন না ট্রাম্প।

সূত্র : আলজাজিরা

টিএম