ক্ষমতার শেষ দিনের বিদায়ী ভাষণে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চার বছর আগে ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাতে অনেকদূর এগিয়েছেন তিনি এবং তার সমর্থকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেয়া শেষ ভিডিও বার্তায় নিজের উত্তরসূরী জো বাইডেনের নাম উচ্চারণ না করলেও বাইডেন-হ্যারিসের নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি, পাশাপাশি ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য সমর্থকদের ভর্ৎসনাও করেছেন।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শেষ দিন। আর কয়েক ঘণ্টা পরই সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউস এবং রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে চলে যাবেন তিনি। বিদায় নেওয়ার আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ট্রাম্প।

ক্যাপিটলে দাঙ্গার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবগুলো প্লাটফর্মে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টুইট করা ২০ মিনিটের ওই ভিডিওতে বাইডেন প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন,‘ আমরা তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা আরো কামনা করছি, তারা তাদের লক্ষ্যে সফল হোন এবং ভাগ্য যেন তাদের সহায় হয়। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজ, এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন যখন দেশের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে, আমি আপনাদের বলতে চাই, আমাদের ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’ আন্দোলন মাত্র শুরু হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘চার বছর আগে…যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিকসহ গোটা পৃথিবীর সামনে এই দেশকে মহান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা শুরু করেছিলাম ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ আন্দোলন। আজ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার সময় আমি গর্বিত যে আমরা আমাদের লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছি।’

তবে গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলা করার জন্য নিজের সমর্থকদের ভর্ৎসনাও করেছেন ট্রাম্প।

ভিডিওবার্তায় এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ক্যাপিটল হিলে যা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ঘটনায় দেশের জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ ধরনের সহিংসতা কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, ক্ষমতা ছাড়ার পর নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সূত্রের বরাত দিয়ে করা ওই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ট্রাম্পের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘প্যাট্রিয়টিক পার্টি’ হতে পারে। তবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে এখনো ট্রাম্পও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার দু’টি দল হলো রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি তার দলের অন্যান্য বেশ কয়েকজন উত্তরসূরির মতো দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে পারেননি।

গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট বাইডেনের কাছে হার তিনি কখনোই স্বীকার করেননি। বিদায়ী ভাষণে একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি ২০ জানুয়ারি দুপুরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া বাইডেনের নাম।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বা প্রথা অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানে উত্তরসূরী প্রেসিডেন্টকে আনতে এয়ারফোর্সের বিমান পাঠান পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট, কিন্তু বাইডেনের বেলায় তা করেননি ট্রাম্প।

এমন কি যাওয়ার আগে জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা বিদায়বেলায় করমর্দনের কোনো কর্মসূচি রাখেননি তিনি। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের কর্মসূচিও একই ধরনের। উত্তরসূরি ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে কোনো আমন্ত্রণ জানাননি তিনি।

বুধবার স্থানীয় সময় মধ্যদুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। কংগ্রেস ভবন পেছনে রেখে নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ মঞ্চ। এখানে দাঁড়িয়েই শপথ নেবেন তাঁরা। তাঁদের শপথ পড়াবেন যথাক্রমে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি সোনিয়া সটোমাইয়র।

অন্যদিকে, বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ট্রাম্প ও মেলানিয়া যাবেন মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে। সেখানে সামরিক অভিভাদন শেষে তারা যাবেন ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতা ছাড়ার পর কিছুদিন ঘণিষ্ঠ কিছু সহযোগীসহ ফ্লোরিয়ডায় থাকবেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া।

সূত্র: আলজাজিরা।

এসএমডব্লিউ