আরও ১০ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছেন বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রেকে বিপর্যস্ত করে দেয়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গতি ত্বরাণ্বিত করতে দশটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মহামারিতে ধুঁকতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার এসব আদেশে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, জো বাইডেনের এসব পদক্ষেপের ফলে দেশটিতে টিকাদান এবং পরীক্ষা কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি পাবে। মহামারি মোকাবিলায় মাস্কের মতো জরুরি কিছু পণ্য-সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধিতে জরুরি আইনের ব্যবহার হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্তগ্রহণে রাজ্য নির্ভরতা বাতিল করে জাতীয় কৌশলের ওপর জোর দিতে ট্রাম্পের নীতির বিপরীতে হাঁটছেন জো বাইডেন।
বিজ্ঞাপন
মহামারি নিয়ন্ত্রণে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বিশ্বে এই মহামারির হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৪৫ লাখের বেশি, বলছে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে নির্বাহী আদেশ জারি করা যায়। এর জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, বুধবার শপথ গ্রহণ করেই করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) আবারও যোগদান, ট্রাম্পের কর সুবিধা বাতিল, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাওয়াসহ ১৫টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন বাইডেন।
বাইডেনের পরিকল্পনায় যা আছে
অভিষেক ভাষণে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারি ‘প্রাণঘাতী সময়ে’ প্রবেশ করেছে বলে সতর্ক করে দেন নাগরিকদের। বাইডেনের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সমন্বয়ক জেফ জিয়েন্টস বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ফেডারেল পর্যায়ে কোনও ধরনের কৌশল ছিল না এবং সামগ্রিক পদক্ষেপের অভাব ছিল।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অফিসে আসায় আজ সবকিছু বদলে যাচ্ছে। জাতীয় কৌশলের মাধ্যমে আমেরিকাকে গত এক শতাব্দির সবচেয়ে ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সঙ্কট থেকে মুক্ত করার একটি রোডম্যাপ আনা হচ্ছে।
আগামী এপ্রিলের মধ্যে দেশটিতে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ এবং আগামী একশ দিনের মধ্যে অধিকাংশ স্কুল নিরাপদে পুনরায় খুলে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জো বাইডেনের নতুন প্রশাসন।
দেশজুড়ে কমিউনিটি স্থাপনা এবং স্টেডিয়ামে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। মহামারি সামলাতে সহায়তা করতে রাজ্য এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের জন্য আরও তহবিল বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজে সমন্বয় করতে জাতীয়ভাবে একটি নতুন অফিসও চালু করা হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া সিদ্ধান্ত বাতিলের ব্যাপারে জো বাইডেনের প্রধান মেডিক্যাল উপদেষ্টা অ্যান্থনি ফাউসি বলেন, দরিদ্র দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স প্রকল্পে যোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলাপকালে বাইডেনের এই উপদেষ্টা সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদাপ্রদান অব্যাহত থাকবে বলে জানান। ট্রাম্প সংস্থাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেটি বাতিল করেছেন বলেও জানান ফাউসি।
কী ঘটেছে বুধবার?
বুধবার প্রেসিডেন্টের শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্পের নেয়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও অভিবাসন সংক্রান্ত নীতিমালাসহ ১৫টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন জো বাইডেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ এবং অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ খুলে যায়।
করোনাভাইরাস বিধি-নিষেধের কারণে বুধবার জো বাইডেনের শপথে অল্পসংখ্যক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। জো বাইডেনের কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গেলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চিরাচরিত মার্কিন ঐতিহ্য উপেক্ষা করে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলের সামনে তৈরিকৃত মঞ্চে প্রেসিডেন্টের শপথ নেয়ার পর জো বাইডেন বলেছেন, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশজুড়ে বড় ধরনের বিভাজন তৈরি করে গেলেও অভিষেক ভাষণে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন জো। সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি; এমনকি যারা তাকে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন তাদেরও।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া যেমন ছিল
বাইডেন হোয়াইট হাউসের শপথ নেয়ার পর জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তোলার বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে। জার্মানির এই চ্যান্সেলর বলেন, জলবায়ু সঙ্কট, করোনাভাইরাস, নিরাপত্তার মতো ইস্যুগুলো যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ইউরোপের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছে।
ওয়াশিংটনে নিয়োজিত চিরবৈরী বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের রাষ্ট্রদূত সুই তিয়ানকাই বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় এবং সু-সম্পর্ক ও বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার জন্য তাকিয়ে আছে বেইজিং।
সূত্র: বিবিসি।
এসএস