মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৈরীভাবাপন্ন দেশ ইসরায়েল এবং ইরানের দ্বন্দ্বে সিরিয়ার কোনোপ্রকার ক্ষয়ক্ষতি রাশিয়া বরদাশত করবে না বলে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।

সম্প্রতি ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানতে কয়েকবার সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইসরায়েল। এর প্রেক্ষিতে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রিয় ইসরায়েলী বন্ধুরা, সিরিয়ার সরকার বা অন্য কোনো গোষ্ঠী থেকে যদি আপনারা কোনো ধরনের হুমকি পেয়ে থাকেন, দ্রুত আন্তর্জাতিক বিশ্বের সামনে প্রমাণসহ তা হাজির করুন। আমরা কথা দিচ্ছি, জরুরিভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

প্রায় দেড় দশক ধরে চলা যুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারকে সহযোগিতা করতে সেখানকার বিভিন্ন বিদ্রোহী জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইরানের সেনাবাহিনী।

সিরিয়ায় ইরানের সেনাবাহিনীর স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে- এমন কিছু ঘটনার সংবাদ রাশিয়া সরকারের কাছে এসেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন লাভরভ।  

সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো দমন ও শান্তি স্থাপনে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীও। বিশেষ করে সিরিয়ার দক্ষিণপূর্ব ও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য দায়ের এজ-জোরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সিরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করার কোনো প্রকার ইচ্ছা যেমন রাশিয়ার নেই, তেমনি সিরিয়া ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো প্রকার রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক আলোচনার পরিকল্পনাও মস্কোর নেই।

তবে মার্কিন সেনাবাহিনীর গতিবিধির ওপর রাশিয়া সার্বক্ষণিক নজর রাখছে উল্লেখ করে লাভরভ বলেন,‘ বিভিন্ন মিলিটারি চ্যানেলের মাধ্যমে আমরা তাদের খোঁজখবর রাখছি। সিরিয়াতে তাদের উপস্থিতি নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই, তবে তারা সেখানে যুদ্ধের নিয়ম যথাযথ মেনে চলছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্যই এই খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’

সিরিয়াতে আইএস এবং আল কায়দাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রায় এক দশক যাবৎ সংঘাত চলছে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী এবং কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনীর। চলমান এই সংঘাতে রাশিয়া এবং ইরান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছে, অন্যদিকে কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনীকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান এবং রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে সিরিয়ার, বিশেষ করে সিরিয়ার অর্থনীতি এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়নে এ দুটি দেশ যুক্ত অনেক বছর ধরে। সিরিয়াতে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হলো, দেশটির ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারকে বিমান ও সেনাসদস্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে রাশিয়া।

অন্যদিকে একই সময়ে রাজধানী দামেস্ককে সুরক্ষায় জাতীয় সেনাসদস্যের বেশ কয়েকটি দল সিরিয়াতে পাঠিয়েছে ইরান। গৃহযুদ্ধ অবসানের পর সিরিয়াতে রাশিয়া ও ইরান- দুই দেশেরই বড় অর্থনৈতিক বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।

সূত্র: মিডিলইস্ট মনিটর

এসএমডব্লিউ