সৌদি আরবের বন্দর নগরী জেদ্দায় সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি তেল ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। সোমবার জেদ্দা বন্দরে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে ট্যাঙ্কারের মালিক কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

সৌদির জ্বালানি অবকাঠামোতে প্রায়ই এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটছে। তবে বিডব্লিউ রাইন নামের ওই তেল ট্যাঙ্কারে সোমবারের বিস্ফোরণের দায় এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী স্বীকার করেনি। 

ট্যাঙ্কারটির মালিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক শিপিং কোম্পানি হাফনিয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, জেদ্দা বন্দর ছেড়ে আসার সময় বাইরের উৎস থেকে বিডব্লিউ রাইন তেল ট্যাঙ্কারে হামলা হয়েছে। এর ফলে ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বন্দরের অগ্নিনির্বাপন কর্মীদের সহায়তায় ট্যাঙ্কারের ক্রুরা আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এতে ট্যাঙ্কারের ২২ কর্মীর কেউই আহত হননি।

জেদ্দায় এই বিস্ফোরণের ব্যাপারে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি। সৌদি আরবের তেল জায়ান্ট কোম্পানি সৌদি আরামকো গ্রুপের তেল বিতরণের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এই বন্দর।

সোমবার মধ্যরাতের পরের এই বিস্ফোরণে ট্যাঙ্কারের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে হাফনিয়া। বিস্ফোরণের কারণে সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। 

সিঙ্গাপুরের এই কোম্পানি বলছে, ট্যাঙ্কারটি থেকে কিছু তেল ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনই এটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে যাত্রা শুরুর আগে ট্যাঙ্কারে যে পরিমাণ তেল ছিল; বিস্ফোরণের পর তেলের পরিমাণ অপরিবর্তিত আছে।  

লন্ডনভিত্তিক সামুদ্রিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান ড্রায়াড গ্লোবালও জেদ্দা বন্দরে বিস্ফোরণের তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ড্রায়াড গ্লোবাল আক্রান্ত তেল ট্যাঙ্কারটি ডোমিনিকান পতাকাবাহী ডেজার্ট রোজ অথবা সৌদি পতাকাবাহী আল আমাল আল সৌদি হতে পারে বলে জানিয়েছে। 

সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শুকাইকে নোঙ্গর করে রাখা গ্রিসের একটি তেল ট্যাঙ্কারে গত মাসে বিস্ফোরণের পর সোমবারের এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। গত মাসের ওই হামলার জন্য ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের দায়ী করেছে দেশটিতে যুদ্ধরত রিয়াদ নেতত্বাধীন সামরিক জোট।

সেই সময় হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের জেদ্দায় সৌদি আরামকোর একটি তেল স্থাপনায় কুদস-২ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর দাবি করে। 

ইয়েমেনের বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর হামলার মুখে ২০১৪ সালে সৌদি আরবে পালিয়ে যান দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দ মনসুর আল হাদি। বিতাড়িত এই প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্যে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তখন থেকে ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি।

ইয়েমেনে এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্ত্যুচুত হয়ে পড়েছেন। দেশটির এই যুদ্ধে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ।

সৌদি আরবের অন্যতম আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান হুথিদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে প্রায়ই অভিযোগ তুলেছে রিয়াদ। যদিও তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। 
 
সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।

এসএস