মোদির মায়ের কাছে কৃষকের খোলা চিঠি
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হিরাবেন মোদির কাছে সাহায্য চেয়ে খোলা চিঠি দিয়েছেন পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার এক কৃষক।
আইন বাতিলের দাবিতে ভারতের হিমাচল রাজ্যের রাজধানী শিমলায় আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কাজ করার অভিযোগে হারপ্রীত সিং নামের ওই কৃষককে ভারতের গত বুধবার গ্রেফতার করেছিল হিমাচল পুলিশ। একদিন পর বৃহস্পতিবারই অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শুক্রবার ওই চিঠি লেখেন হারপ্রীত। চিঠিতে নরেন্দ্র মোদির মা হিরাবেন মোদিকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, ‘প্রিয় মা, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী আপনার ছেলে। আমার মনে হয় তিনি আপনার কথা ফেলতে পারবেন না। দয়া করে হাজার হাজার কৃষককে সাহায্য করুন, যারা কৃষক বিরোধী আইন বাতিলের দাবিতে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে দিল্লি সীমান্তে অবস্থান নিয়েছেন।’
বিজ্ঞাপন
‘আমি এই আশায় আপনাকে লিখছি যে আপনার ছেলে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেন ওই তিন কৃষি আইন বাতিল করেন।’
হারপ্রীত ছাড়াও বুধবার পাঞ্জাবের মোহালি জেলার করণদীপ সন্ধু ও চন্ডিগড়ের গুরপ্রীত সিংকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে জানানো হয়েছে, শিমলার দ্য রিজ রোড এলাকায় বিক্ষোভ সংগঠিত করার অভিযোগে তাদেরকে সিআরপিসি ১০৭ এবং ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে নিজ জেলা ফিরোজপুরে ফিরে যান হারপ্রীত। তিনি জানান, শিগগিরই ওই চিঠি পোস্ট করবেন।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গত বছর নভেম্বর থেকে ভারতীয় কৃষকরা টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। পাঞ্জাব থেকে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন ইতোমধ্যে দিল্লিসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকরা রাজধানী দিল্লিতে প্রবেশ করতে চাইছেন।; কিন্তু দিল্লি সীমান্তেই তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে।
শীত মৌসুমে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেই কৃষকরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যতদিন পর্যন্ত সরকার ওই তিন আইন বাতিল না করবে ততদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
রয়টার্সসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যা ও দিল্লির তীব্র ঠাণ্ডাজনিত কারণে এ পর্যন্ত আন্দোলনে মারা গেছে ৬০ জনেরও অধিক কৃষক।
তাদের ক্ষোভের একটি বড় কারণ পাস করা আইন অনুযায়ী যে কোনো সময় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি(মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) , যা এতদিন ফসলের দাম নিশ্চিত করেছে তা প্রত্যাহার করে নিতে পারবে সরকার।
ভারতীয় কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন কৃষি আইনের ফলে সরকার আর ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে বাধ্য থাকবে না। বাজারের উপর সরকারের নজরদারিও কমে যাবে। ফলে বাজারের নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বড় বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির হাতে চলে যাবে এবং কৃষকদের জীবন তাদের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
গত ১২ জানুয়ারি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নতুন তিনটি কৃষি আইন বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশের আগে নয়টি বৈঠক হয়েছিল সরকার ও কৃষকদের প্রতিনিধি দলের মধ্যে, স্থগিতাদেশর পর আরো দু’টি বৈঠক হয়েছে; কিন্তু সরকার আইন বাতিল না করার ব্যপারে অনড় থাকায় কৃষকরা আন্দোলন জারি রেখেছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসএমডব্লিউ