করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। মহামারি মোকাবিলায় টিকা আবিষ্কার হলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি মানুষের জীবন। আর এর মধ্যেই পরবর্তী মহামারি মোকাবিলায় ‘যুদ্ধের মতো’ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তার মতে, এই প্রস্তুতির জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বার্ষিক চিঠিতে তিনি এই আহ্বান জানান।

চিঠিতে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস বলেন, ‘আমরা আবারও প্রস্তুতিহীন থেকে মহামারি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো না। প্রতিরোধের চেষ্টা না করা পর্যন্ত পরবর্তী মহামারির হুমকি সব সময় আমাদের মাথার ওপর রয়েছে।’

করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ২১ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। গেটস বলেন, ‘ভবিষ্যৎ মহামারিতে এ ধরনের বিশাল সংখ্যক প্রাণহাণির ঘটনা এড়াতে আমাদেরকে যুদ্ধের হুমকি মোকাবিলার ন্যায় প্রস্তুতি নিতে হবে।’

‘আর টেকসই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রতিবছর বিনিয়োগ করতে হবে শত শত বিলিয়ন ডলার। সন্দেহ নেই- এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে- করোনাভাইরাস মহামারি সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ২৮ লাখ কোটি ডলার খরচ করিয়েছে।’

তার ভাষায়, ‘ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার (এবং লাখ লাখ মানুষের জীবন) বাঁচাতে বিশ্বকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মহামারির দমকলবাহিনী হতে হবে। একদম ফায়ার ফাইটারের মতো, পেশাদারভাবে সম্পূর্ণ প্রশিক্ষিত হতে হবে।’

একইসঙ্গে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মহামারি বা নতুন জীবাণুর ব্যাপারে সবসময় সতর্ক রাখতে হবে। এজন্য নিয়মিত ‘জীবাণু-খেলা’ আয়োজনের পরামর্শও দিয়েছেন গেটস। তার মতে, ‘ধারাবাহিকভাবে এটি (জীবাণু-খেলা আয়োজন) করতে হবে। আমরা কীভাবে নতুন জীবাণু বা মহামারির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি, এখানে সেটা বোঝা যাবে। সেনাবাহিনী বাস্তব জীবনের যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেয়, ঠিক সেভাবে (প্রস্তুতি নিতে হবে)। অগ্নি নির্বাপণকর্মীরাও এভাবে প্রস্তুতি নেয়। যত দ্রুত আপনি ব্যবস্থা নেবেন, তত তাড়াতাড়ি ভাইরাস ঠেকাতে পারবেন।’

তাই পরবর্তী মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন হাজার জনের একটি প্রশিক্ষিত ও পেশাদার ‘মহামারি ফায়ারফাইটার’ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন গেটস। যাদের কাজ হবে, বিশ্বের কোনো স্থানে মহামারি বা নতুন ভাইরাস দেখা দিলে সেটা মোকাবিলায় তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে ছুটে যাওয়া।

গেটস বলেন, পৃথিবী এখন বুঝতে পারছে মহামারি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। তাই সামনের দিনে (মহামারি) মোকাবিলা সহজ হবে বলেও আশা করেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় বিল এন্ড মেলিন্ড গেটস ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী ১৭৫ কোটি ডলার খরচ করেছে। একইসঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকা উৎপাদনে অর্থায়নও করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র: এএফপি

টিএম