করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। এর মধ্যে আবিষ্কার হয়েছে টিকা। তবে চিন্তার ভাজ বাড়িয়েছে ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন দুটি ধরন। ইউরোপ ও আফ্রিকার এই দেশ দুটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার ওই দুটি নতুন ধরন বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে বলে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

করোনা মহামারি নিয়ে দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে সংস্থাটি জানিয়েছে, ব্রিটেনে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনটি জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের ৭০টি দেশে ছড়িয়েছে। ‘ভিওসি ২০২০১২/০১’ নামে পরিচিত ওই ধরনটি সাধারণ করোনাভাইসের তুলনায় একজন থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ হয় এবং গত এক সপ্তাহে তা নতুন করে আরও ১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভাইরাসের এই নতুন ধরনটি তুলনামূলক বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে বলে গত সপ্তাহে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একটি গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু বুধবার ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, গবেষণায় প্রাপ্ত ওই ফলাফল প্রাথমিক এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ধরন এখন পর্যন্ত ৩১টি দেশে ছড়িয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। গত এক সপ্তাহে এটি নতুন করে আরও আটটি দেশে ছড়িয়েছে।

ডব্লিউএইচও বলছে, ‘৫০১ওয়াই.ভি২’ নামের ওই ধরনটি ব্রিটেনে শনাক্ত করোনা ধরনের থেকেও বেশি সংক্রামক বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এটাকে খুব উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

এর আগে গবেষকরা দাবি করেছিলেন, একাধিক মিউটেশন ঘটে এটি এখন ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। তাছাড়া এটা কমবয়সীদের শরীরে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি টিকার কার্যকারিতায়ও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ, কোয়াজুলু-নাটাল এবং ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশে প্রথম ধরা পড়ে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি। সেসময় দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রথম সংক্রমণের খবর আসে নেলসন ম্যান্ডেলা বে থেকে। ভাইরাসের এই প্রকারভেদে অন্তত তিনটি পরিবর্তনের কথা জানা গেছে।

বর্তমানে যে টিকাগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো কতটা কাজ দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি এক বার করোনা হয়ে যাওয়া ব্যক্তিও এই ভাইরাসের নতুন এই ধরনে নতুন করে আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড লেসেলস জানিয়েছিলেন, বর্তমানে যে ভ্যাকসিনগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো কতটা কাজ দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি এক বার করোনা হয়ে যাওয়া ব্যক্তিও এই ভাইরাসের নতুন এই ধরনে নতুন করে আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

এখন পর্যন্ত ৫৬টি দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এসব দেশে টিকা নিয়েছেন ৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ। জনসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২৯ শতাংশ জনগণকে টিকা দিয়ে ইসরায়েল আছে শীর্ষে।

এদিকে বছরের শুরু থেকে ৭ দশমিক ৭ সেকেন্ডে গড়ে একজন করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। একই সময়ে দৈনিক ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৫০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুহার এখন ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।  

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের করা হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত মানুষের অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা। অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বাস এসব দেশে। 

উল্লেখ্য, করোনায় সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। চীন থেকে প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর মোট করোনা রোগীর সংখ্যা পাঁচ কোটি ছাড়াতে সময় লেগেছিল ১১ মাস। এর পরের মাত্র তিন মাসে আরও পাঁচ কোটি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

সূত্র: এএফপি

টিএম