সেনাপ্রধানের হুঙ্কারে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের শঙ্কা
নির্বাচনে জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ নিয়ে সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় মিয়ানমারের সেনাপ্রধান দেশটির সংবিধান বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোট জালিয়াতির ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রয়োজনে সংবিধান বাতিল হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং।
গত বছরের নভেম্বরে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই নির্বাচনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দেশটির রাজনৈতিক দল এনএলডি ভূমিধস জয় লাভ করে।
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের পর বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে অস্বস্তি শুরু হয়। ২০০৮ সালে সেনারচিত সংবিধান অনুযায়ী দেশটিতে কয়েকযুগ পর অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের ওই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ও শান্তি নোবেল জয়ী অং সান সু চি।
সেনাবাহিনীতে ক্ষমতা ভাগাভাগির দ্বন্দের কারণে পুরো ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র তা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের প্রভাবশালী সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লেইং দেশটির সেনাবাহিনী প্রকাশিত দৈনিক মায়াবতীতে এক নিবন্ধে চড়া সুর চড়িয়েছেন। সেনাবাহিনীর এই প্রধান বলেছেন, ২০০৮ সালের সংবিধান দেশের ‘সব আইনের মা’ এবং এর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে সেই সংবিধান বাতিলের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধানের মন্তব্যে সেনাবাহিনীর দাবির প্রতিধ্বনি শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত দেশটির নির্বাচন কমিশন সেই তালিকা প্রকাশ করেনি।
প্রায় পাঁচ দশকের সামরিক স্বৈরশাসনের কবল থেকে ২০১১ সালে বেরিয়ে আসার পর মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত নভেম্বরে। ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ী হলেও সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদের কারণে অং সান সু চি দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে পারেননি। স্বামী বিদেশি নাগরিক হওয়ায় মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির প্রধান হতে পারেননি তিনি। বরং স্টেট কাউন্সিলরের পদে বসে দেশ পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় এই এনএলডি নেত্রী।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য ভোটার তালিকা প্রয়োজন। দেশজুড়ে অন্তত ৮৬ লাখ ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে সেনাবাহিনী।
প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর এলডি দেশটির সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু করে; যদিও সেই প্রক্রিয়া খুব বেশি এগোয়নি। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোয়ে মিন্ত অং বলেন, সংবিধানে বিশাল ফাঁক-ফোকড় দেখছে সেনাবাহিনী; যা তাদের ক্ষতি করছে। সেনাপ্রধানের অভ্যুত্থানের এই হুমকি অন্তঃসারশূন্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন এবং সরকার যদি নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না নেয়; তাহলে সেনাবাহিনী পুরো ক্ষমতা ছিনিয়ে না নিলেও কিছু ব্যবস্থা নিজ থেকেই গ্রহণ করবে। নভেম্বরে নির্বাচনে সেনাবাহিনী জালিয়াতির অভিযোগ করলেও দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
মিয়ানমারে সর্বশেষ সংবিধান বাতিল করা হয়েছিল ১৯৬২ এবং ১৯৮৮ সালে। ওই দুই বছর সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার পর পুনরায় সামরিক জান্তা সরকার চালু করে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস