যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র‌্যাট পার্টির মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত করেছে দেশটির ইলেকটোরাল কলেজ। এর ফলে দেশটির প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাগ্রহণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি।

ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র যাবতীয় ‘আঘাত, পরীক্ষা এবং হুমকি’ সহ্য করে আরও বেশি ‘প্রাণবন্ত, সত্য এবং শক্তিশালী’ হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষারোপ করেন বাইডেন।

ইলেকটোরাল কলেজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পর বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন; যিনি এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রসঙ্গে নিশ্চুপ ছিলেন।

অধিকাংশ বিশ্ব নেতা জো বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ভোট শেষ হওয়ার পরদিন ৩ নভেম্বরে। বিলম্বে শুভেচ্ছা জানানোর কারণ হিসেবে অবশ্য মস্কো’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়া ইলেকটোরাল কলেজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির অপেক্ষায় ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক এবং অন্যতম আবশ্যিক ধাপ ছিল ইলেকটোরাল কলেজের এই স্বীকৃতি। দেশটির প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, সাধারণ ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে মূলত ইলেক্টরদের নির্বাচিত করেন। এই ইলেক্টরদের ভোটে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট।

গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের ৩০৬টি ভোট পেয়ে জয়ী হন জো বাইডেন।অন্যদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝুলিতে আসে ২৩২টি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এখনও ইলেকটোরাল কলেজের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে এই স্বীকৃতির কিছু সময় পরই অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার; যিনি বলেছিলেন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ ছাড়া নির্বাচনে কারচুপির পক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সোমবার এক টুইট বার্তায় উইলিয়াম বারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

গণতন্ত্রের শিখা

নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিতে আইনী লড়াইসহ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশের যেসব সাধারণ নাগরিক সমর্থন করেননি, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারে দেয়া এক ভাষণে তাদের প্রশংসা করেন জো বাইডেন।

এমন অভূতপূর্ব অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের রায়, এমনকি যদি তা গ্রহণ করে নিতে কষ্টও হয়, তবুও তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনই আমাদের গণতন্ত্রের জীয়নকাঠি।’

বহু বছর পূর্বে আমাদের জাতি গণতন্ত্রের শিখা প্রজ্বলিত করেছিল এবং আমরা জানি কোনও মহামারি বা ক্ষমতার কোনও ধরনের অপব্যবহারে এই শিখা নেভার নয়।

জো বাইডেন

তিনি বলেন,‘আমাদের যাবতীয় তিক্ততা পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। সময় হয়েছে আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের দিকে তাকানোর, একত্রিত হওয়ার এবং সুস্থ হয়ে ওঠার।’

তবে করোনাভাইরাস যদি তার ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে, সেক্ষেত্রে অনাগত মাসগুলো আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে জনগণকে সতর্ক করেন বাইডেন।

আমাদের সামনে এখন সব থেকে জরুরি যে কাজ, তা হলো এই মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এ দেশের প্রত্যেক নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসা।

নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

মহামারি ও অন্যান্য কারণে দারিদ্র্যের শিকার মার্কিন নাগরিকদের সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ এবং দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন বাইডেন।

এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নবনির্বাচিত এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, যখন দেশটিতে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। 

সূত্র: বিবিসি।

এসএমডব্লিউ/এসএস