বিলাসবহুল ‘পুতিনের প্রাসাদের’ মালিকানা নিয়ে বিতর্ক
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিলাসবহুল প্রাসাদ রয়েছে। সম্প্রতি একটি প্রামাণ্যচিত্রে এমনটি দাবি করা হলেও দেশটির ধনকুবের ব্যবসায়ী আর্কাদি রটেনবার্গের দাবি, কৃষ্ণ সাগরে বিলাসবহুল এক অট্টালিকার মালিক তিনিই - প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নন। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) প্রকাশ্যে নিজেকে এই প্রাসাদের মালিক দাবি করেন তিনি।
বিশাল এই প্রাসাদ নিয়ে সম্প্রতি চালানো এক তদন্তের খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় গত সপ্তাহে এবং দশ কোটি মানুষ ইতোমধ্যেই এই তদন্তের কেন্দ্রে থাকা প্রাসাদের ভিডিওটি দেখেছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি তার প্রাসাদ দাবি করে যে বিলাসবহুল অট্টালিকার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছেন, সে প্রাসাদ কখনই তার নয়।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে অভিযোগ করা হয়, কৃষ্ণ সাগরের তীরে এই প্রাসাদোপম অট্টালিকার অর্থায়ন করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের কোটিপতি বন্ধুরা। বলা হয়, এই প্রাসাদে রয়েছে জুয়া খেলার ক্যাসিনো, বরফের ওপর স্কেটিং করার রিংক এবং আঙুরের ক্ষেত।
বিজ্ঞাপন
তবে ধনকুবের আর্কাদি রটেনবার্গ নিজেকে এই প্রাসাদের মালিক দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ক্রেমলিনপন্থী ম্যাশ টেলিগ্রাম নামে একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সামনে এসেছে। এরপর এই খবর নিশ্চিত করে খবর প্রকাশ করেছে ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা।
রটেনবার্গকে উদ্ধৃত করে তার তথ্য দপ্তর জানায়, ‘কয়েক বছর আগে এই অট্টালিকার সঙ্গে জড়িত কিছু পাওনাদারের সাথে আমার একটি চুক্তি হয় এবং এরপরই এই সম্পত্তির মালিকানা আমার হাতে আসে।’
তার দাবি, আগামী ‘দুই বছরের মধ্যে’ এই তৈরির সব কাজ সম্পন্ন হবে। এটিকে একটি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল হিসাবে তৈরি করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এই প্রাসাদ নিয়ে বিতর্ক কেন?
চলতি মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক এবং বর্তমানে কারারুদ্ধ রাশিয়ার বিরোধী রাজনীতিক আলেক্সি নাভালনি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেন। এরপরই এই সম্পত্তি নিয়ে রাশিয়ায় বিরাট বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছে- এই সম্পত্তির মূল্য ১৩৭ কোটি ডলার এবং এটির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের ঘুষের অর্থ’ দিয়ে।
বিবিসির সাংবাদিক টিম হোয়েওয়েল এই রহস্যজনক প্রাসাদ নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করেন ২০১২ সালে। ওই প্রতিবেদনে তিনি পুতিনের সাবেক একজন ব্যবসায়িক সহযোগীকে উদ্ধৃত করে করে অভিযোগ করেছিলেন- এই অট্টালিকা প্রেসিডেন্ট পুতিনের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তার পছন্দ এবং চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু সেসময় পুতিনের একজন মুখপাত্র এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে, এই প্রাসাদের মালিক তিনি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য নন বলে অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রাসাদের ওই ভিডিওকে ‘একঘেঁয়ে’ বলে বর্ণনা করেন।
আর্কাদি রটেনবার্গ কে?
ধনকুবের রটেনবার্গ রাশিয়ায় বিশাল এক ব্যক্তিত্ব। সেতু এবং গ্যাস পাইপলাইনের মত অবকাঠামো নির্মাণের বিশাল এক সংস্থার মালিক তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি পুতিনের বন্ধু এবং জুডো খেলার সঙ্গী ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে রটেনবার্গ এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংকের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার এবং নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গোপনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রকাশ পায়।
এই রুশ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আমেরিকা ২০১৪ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তখন তাকে ‘রুশ নেতার ঘনিষ্ঠ মহলের’ একজন সদস্য হিসাবে বর্ণনা করেন আমেরিকান কর্মকর্তারা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
টিএম