প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদে দুইবার অভিশংসনের শিকার হয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাগ্য এখন ঝুলছে সিনেটের হাতে। এজন্য আইনজীবীও নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই শুনানির আগেই নিজের পক্ষের পাঁচ আনইজীবীকে হারিয়েছেন ট্রাম্প।

দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) একথা জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি। ট্রাম্পের আইনি কৌশল নিয়ে মতভেদের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

বার্তাসংস্থা এপি বলছে, সিনেটে অভিশংসন শুনানি মোকাবিলায় সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্য থেকে বুচ বাউচার ও দেবোরাহ বারবিয়ারকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তারা উভয়েই ট্রাম্পের ডিফেন্স টিম থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাদের একজন বলছেন, সিনেটে অভিশংসন শুনানির আইনি কৌশল নিয়ে মতভেদের কারণে ‘পারস্পারিক সম্মতিরি’ ভিত্তিতে তরার সরে দাঁড়িয়েছেন।

বুচ বাউচার ও দেবোরাহ বারবিয়ার অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সিনেটে দ্বিতীয় অভিশংসন শুনানির মাত্র সপ্তাহখানেক আগে এমন নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। নিজের পক্ষে লড়তে ইচ্ছুক এমন আইনজীবী খুঁজে পেতে ট্রাম্প রীতিমতো ‘সংগ্রাম করছেন’ বলেও জানিয়েছে সিএনএন। এছাড়া কোনো প্রমাণ ছাড়া নির্বাচনে জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগে অনড় থাকা সদ্য সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সিনেট শুনানির দিন কয়েক আগে হঠাৎ করেই নিজেকে আইনি প্রতিনিধিহীন অবস্থায় দেখতে পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, ট্রাম্পের ডিফেন্স টিম থেকে কয়েকজন সরে দাঁড়ানোয় নতুন করে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হবে এবং আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই নতুন নাম ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। আর এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়েন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন।

কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগও করেছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের হাতে। সিনেটে অভিশংসিত হলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না তিনি। আগামী ৮ ঢেব্রুয়ারি এই শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে গত সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন সংক্রান্ত নথি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে হস্তান্তর করেন প্রতিনিধি পরিষদের আইনপ্রণেতারা। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির মনোনীত নয় জন আইনপ্রণেতা অভিশংশন সংক্রান্ত দলিলপত্র সিনেটের কাছে হস্তান্তর করেন।

রয়টার্স জানিয়েছিল, এই অভিশংসন বিচারে প্রসিকিউটরের ভূমিকায় থাকবেন প্রতিনিধি পরিষদের নয়জন ডেমোক্র্যাট সদস্য। সোমবার ট্রাম্পের অভিশংসন নথি জমা দেওয়ার আগে তারা হাউজের সচিব অ্যাট আর্মসকে সঙ্গে নিয়ে নীরবে পুরো ক্যাপিটল প্রদক্ষিণ করেন। এরপরই অভিশংসন বিচারের জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সিনেটের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।

উল্লেখ্য, জো বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন। সমর্থকদের চালানো এই হামলায় ট্রাম্প উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য সেসময় দাবি করেছিলেন , ক্যাপিটল হিলে যারা হামলা করেছে তারা ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোকজন’ বা ‘অ্যান্টিফা পিপল’। তার ভক্ত বা অনুসারী নয়।

সূত্র: সিএনএন, এপি

টিএম