মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে আটক অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান নেতা অং সান সু চিকে আটক করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ সুচির দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকেও আটক করা হয়েছে। এনএলডি’র মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এ খবর নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এনএলডি মুখপাত্র মিও নয়েন্ট বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট মিন্ট এবং অন্য নেতাদের সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে আটক করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে রাজধানী নেপিদোতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। এর ফলে মিয়ানমারের রাজধানী গোটা বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফলে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে, কিছু কারিগরি সমস্যার মুখে পড়ায় তাদের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। আজ সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী সেই অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জনাথান হেড জানিয়েছেন, রাজধানী নেপিদো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনাবাহিনী সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এছাড়া রাজধানী নেপিদোতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে।
রয়টার্সকে মিও নয়েন্ট বলেন, ‘আমি জনগণকে বেপরোয়া কিছু না করার অনুরোধ করছি, আমি চাই তারা আইন মেনে চলবেন।’
তিনি নিজেও আটক হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, ‘এখন যা ঘটছে, তাতে সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
তবে এসব বিষয়ে সামরিক বাহিনীর কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে নির্বাচনে জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ নিয়ে সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের আশঙ্কার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দেশটির সংবিধান বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান। ক্ষমতাসীন এনএলডি ও নির্বাচন কমিশন ভোট জালিয়াতির ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রয়োজনে সংবিধান বাতিল হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং।
গত বছরের নভেম্বরে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই নির্বাচনে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন এনএলডি ব্যাপক জয় লাভ করে।
২০১৫ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের পর বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে অস্বস্তি শুরু হয়। ২০০৮ সালে সেনারচিত সংবিধান অনুযায়ী দেশটিতে কয়েকযুগ পর অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের ওই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ও শান্তি নোবেল জয়ী অং সান সু চি।
প্রায় পাঁচ দশকের সামরিক স্বৈরশাসনের কবল থেকে ২০১১ সালে বেরিয়ে আসে মিয়ানমার। এরপর গণতান্ত্রিকভাবে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত নভেম্বরে। ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ী হলেও সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদের কারণে অং সান সু চি দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে পারেননি। স্বামী বিদেশি নাগরিক হওয়ায় মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির প্রধান হতে পারেননি তিনি। বরং স্টেট কাউন্সিলরের পদে বসে দেশ পরিচালনা করেছেন এই এনএলডি নেত্রী।
মিয়ানমারে সর্বশেষ সংবিধান বাতিল করা হয়েছিল ১৯৬২ এবং ১৯৮৮ সালে। ওই দুই বছর সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর পুনরায় সামরিক জান্তা সরকার চালু করে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম