জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষে মিয়ানমারে নতুন করে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। সোমবার ভোরের দিকে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেনাবাহিনীর মুখপত্র মায়াবতী টেলিভিশনে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সকালের দিকে সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে দেশের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে নেওয়ার এবং এক বছরের জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেয়া হয়। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছেন, নির্বাচনে জয়ীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে সামরিক বাহিনী। 

দেশটির নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ইউ মিয়ন্ট সোয়ের সঙ্গে জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের (এনডিএসসি) এক বৈঠকে অংশ নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেনাবাহিনী এখন ২০০৮ সালে সেনারচিত খসড়া সংবিধানের বিধি-বিধান এবং বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন করবে। দেশটির নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ইউ মিন্ট সোয়ে এর আগে রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) ক্ষমতাসীন সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। 

দেশের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবার ভোরের দিকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট ইউ উইন মিন্ট, বেশ কয়েকটি রাজ্যের এনএলডির কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যকে আটক করে সেনাবাহিনী।

অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয়ার পরপরই দেশটির রাজধানী নেইপিদোতে অবস্থিত সংসদ ভবন বন্ধ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রথমে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু এলাকায় সচল করা হয়। তবে দেশজুড়ে মোবাইল ফোন সেবা ভোর থেকেই বন্ধ রয়েছে।

নির্বাচিত নতুন সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আগ মুহূর্তে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ইউ মিন্ট সোয়ে ২০০৮ সালের সেনারচিত সংবিধানের ৪১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন। এছাড়া সংবিধানের ৪১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের আইন, প্রশাসনিক এবং বিচারিক ক্ষমতা সেনাবাহিনীর প্রধানের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সামরিক অভ্যুত্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে এক কোটিরও বেশি অনিয়মের অভিযোগ আছে বলে দাবি করেছে। দেশটির সব রাজ্য এবং অঞ্চলের সাধারণ এই নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সেনাবাহিনী।

সামরিক বাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নিতে সরকারের ব্যর্থতা, এনএলডির নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা এবং সংসদের অধিবেশন ডাকায় সেনাবাহিনী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নিতে বাধ্য হয়েছে।

গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। দেশটির পার্লামেন্টের এক হাজার ১১৭ আসনের মধ্যে সু চির এনএলডি ৯২০টিতে জয় পায়।

এসএস