মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে বসবাসরত সংখ্যালঘু প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের দুর্দশা আরও প্রকট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সোমবার সংস্থাটির একজন মুখপাত্র এই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষেদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্র মিয়ানমারের অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার আলোচনায় বসবে।
 
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সোমবার মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্য আরও বেশ কয়েকজন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাকে আটক করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আটকা রয়েছেন এই রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এবং পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান পরিচালনার অভিযোগ করেছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনার দাবি করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানে ডুজারিক বলেছেন, রাখাইন প্রদেশে এখনও প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে; যাদের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজারের মতো এখনও আশ্রয় শিবিরে বন্দি। তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন না এবং মৌলিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবার মতো অধিকারগুলো থেকে চরমভাবে বঞ্চিত।

কূটনীতিকরা বলছেন, মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করেছেন। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের চলতি মাসের সভাপতি রাষ্ট্র ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, ‌‘আমরা শান্তি ও সুরক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদী হুমকির সমাধান এবং মিয়ানমারের এশিয়া ও আসিয়ান প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।’

২০১৭ সালের রাখাইনে সামরিক অভিযানের পর থেকে রাশিয়ার সমর্থনে চীন নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনও ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে রক্ষায় ভেটো দিয়ে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদে বেইজিং, মস্কো ছাড়াও ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

এ কারণে আমাদের ভয় হচ্ছে যে, সামরিক অভ্যুত্থান সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানে ডুজারিক

জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা মিশন সোমবার ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদের মঙ্গলবারের বৈঠকে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবে বলে আশা করছে। চীনা মিশনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এটি আমাদের আশাবাদী করছে যে, পরিষদের যেকোনও পদক্ষেপ মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলার পরিবর্তে স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলেছে, গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও অন্যান্যদের আটক, দেশের শাসন ক্ষমতা সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের হাতে হস্তান্তর এবং আগামী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

ডুজারিক বলেছেন, মিয়ানমারে আটক সবার মুক্তি দাবি করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র বলেন, মিয়ানমারে নিযুক্ত মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন স্ক্রানার বার্গনার মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখছেন এবং এই বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবগত করবেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস