ওয়াকি-টকি মামলা: দু’বছরের কারাদণ্ড হতে পারে সু চির
‘অবৈধ’ ওয়াকি-টকি রাখার অভিযোগে সেনাবাহিনীর দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে অং সান সু চির। দেশটির পুলিশ বিভাগের সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্টেট কাউন্সিলরের উপাধি নিয়ে অং সান সু চি মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেতা হিসেবে দেশ পরিচালনা করে আসছিলেন। সোমবার অভ্যুত্থানের পর নেইপিদোতে তার বাসভবনে সামরিক কর্মকর্তাদের তল্লাশি অভিযানের সময় ওয়াকি-টকি পাওয়া যায়; যা দেশটির আমদানি-রফতানি আইনের লঙ্ঘন করে আমদানি এবং অবৈধভাবে অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দু’দিন পর মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চিকে দুই সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির পুলিশ। আমদানি-রফতানি আইন লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
এনএলডির মুখপাত্র কী তোয়ে বলেছেন, অং সান সু চি আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক থাকবেন। তিনি বলেছেন, ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী- অং সান সু চির বিরুদ্ধে আমদানি ও রপ্তানি আইনে ১৪ দিনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’ এছাড়া দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের দায়ে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান এনএলডির ওই মুখপাত্র।
বিজ্ঞাপন
এদিকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এনএলডি সরকারের পতন এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণপ্রতিবাদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘অমঙ্গল দূর হবে’ বলে স্লোগান দেন এবং রীতি অনুযায়ী অমঙ্গল দূর করতে হাঁড়ি-পাতিল বাজান।
এছাড়া দেশটির রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরের ৭০টি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সামরিক সরকারের অধীনে তারা চিকিৎসা সেবা দেবেন না।
তাদের অভিযোগ, সামরিক শাসকরা শুধু নিজেদের এবং সরকার ঘনিষ্ঠদের চিকিৎসা সেবার ওপরই গুরুত্ব দেবেন- সাধারণ জনগণের কথা তারা চিন্তা করবেন না। ধর্মঘটের একজন সংগঠক এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সামরিক সরকারের অধীনে চিকিৎসা সেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ দেশের সাধারণ মানুষদের প্রতি এই সামরিক শাসকদের যে ন্যূনতম সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ নেই- অতীতে এমন বহু নজির দেখা আছে আমাদের।’
ধর্মঘটে অংশ নেওয়া পশ্চিম ইয়াঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক কিয়াও এ বিষয়ে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।’
আন্দোলনের অংশ নিতে হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেওয়া ওই চিকিৎসক আরো বলেন, ‘আমার সাবেক কর্মস্থলের রোগীদের জন্য কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এখন আর উপায় নেই। চাকরিতে থাকা অবস্থা নিজের সামর্থ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে তাদের সেবা করে গেছি- এই স্বান্তনা নিয়েই আন্দোলনে নেমেছি।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএমডব্লিউ