ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে ‘টুইটযুদ্ধ’ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে দেশটির অভিনয় এবং ক্রীড়াজগৎ। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। খবর জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের। 

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতে কৃষক আন্দোলন চলছে। দিল্লির সীমানায় এখনো বসে আছেন লাখো কৃষক। গত মঙ্গল ও বুধবার একাধিক ক্রীড়া ও অভিনয় জগতের তারকা কৃষক বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়ে টুইট করেন।

দীপিকা পাড়ুকোন ও তাপসী পান্নুর মতো অভিনেত্রীরা যেমন রয়েছেন, তেমন রয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং, অলিম্পিকে দেশটিকে পদক এনে দেওয়া বীজেন্দ্র সিংরা। কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। প্রীতি জিনতাও সমর্থনের কথা গোপন করেননি।

তাপসী পান্নু কৃষকদের সমর্থন করলেও সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অক্ষয় কুমার।

তবে বুধবার শোরগোল ফেলে দেন বিশিষ্ট হলিউড গায়িকা ও অভিনেত্রী রিহানা। নিজের টুইটারে বিক্ষোভরত কৃষকদের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, আন্দোলনরত কৃষকদের কেন সমর্থন করবে না গোটা বিশ্ব?

এখানেই শেষ নয়। রিহানার টুইটের কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম মুখ গ্রেটা থানবার্গ কৃষকদের সমর্থনে টুইট করেন। আন্তর্জাতিক এই দুই ব্যক্তিত্বের টুইটের পরেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।

বুধবার রাতেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানায়, রিহানাদের টুইট দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ‘অতিরঞ্জিত’ বা ‘সেনসেশনাল’। মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, দেশের একাংশের কৃষক নতুন কৃষি আইন নিয়ে আন্দোলন করছে। এতে সবার সমর্থন নেই। পুরো বিষয়টি না জেনে এ ধরনের টুইট করা উচিত নয়।

ওই বিবৃতির পর সরকারের সমর্থনে ক্রীড়া ও অভিনয় জগতের আরেকটি অংশ সরব হয়। পরপর টুইট করতে থাকেন শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি ও অনিল কুম্বলেসহ একাধিক বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা। তাদের বক্তব্য, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা জরুরি। বিদেশ কোনো শক্তি যেন সার্বভৌমত্বে আঘাত হানতে না পারে।

অক্ষয় কুমার আরও অজয় দেবগনের মতো বলিউডের নামকরা অভিনেতারাও কৃষি আইন নিয়ে বিক্ষোভ কৃষকদের পাশে নয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের করা টুইটের ভাষাও কার্যত একইরকম। বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করেছেন প্রবীণ ভারতীয় গায়িকা লতা মঙ্গেশকর। তিনিও সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই অভিনয় জগতে এই বিভাজন স্পষ্ট। দীপিকা, তাপসীরা শুধু সরকারবিরোধী টুইট করেননি, বিভিন্ন আন্দোলনেও সামিল হয়েছেন। জেএনইউয়ে আহত শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দীপিকা। সে জন্য তাকে অ্যান্টি-ন্যাশনাল বা জাতীয়তাবিরোধী তকমাও পেতে হয়েছে। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবার কৃষক আন্দোলন ঘিরে তারকার টুইটযুদ্ধ স্পষ্ট মেরুকরণ তৈরি করে দিয়েছে।

জেএনইউয়ে আহত শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দীপিকা।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, হলিউড স্টার রিহানার টুইটকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে সরকার নিজেই নিজের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। এর ফলে পুরো বিষয়টি লাইম লাইট পেয়েছে।

এ দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গণতন্ত্রের লক্ষণ। পরোক্ষভাবে ওয়াশিংটনও কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বলে কোনো কোনো কূটনীতিকের বক্তব্য। যদিও এর আগে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল যে, ভারতের নতুন কৃষি আইন বাজার উন্মুক্ত করে দেবে।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টেও ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে একটি বিতর্কসভার আহ্বান করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে বেশ কিছু শিখ আইনপ্রণেতা আছেন। প্রথম থেকেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তারা কৃষক আন্দোলন নিয়ে সরব। এর আগেও এ বিষয়ে তারা বিতর্ক চেয়েছিলেন।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

এএস