ইয়েমেনে সৌদিকে সমর্থন দেবেন না বাইডেন
মানবিক ও কৌশলগত বিপর্যয় বলে অভিহিত করে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের পক্ষে ওয়াশিংটনের সমর্থন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। বিশ্বব্যাপী কূটনীতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জোরদারের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথম পরিদর্শন ও সেখানে কূটনীতিকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাইডেন একথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ইয়েমেন আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ। দেশটিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হামলা মানবিক ও কৌশলগত বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। কূটনীতির মাধ্যমে দেশটিতে চলমান পাঁচ বছরের সংঘাতের অবসান ঘটানো সম্ভব বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এসময় ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত হিসাবে টিমোথি লেন্ডারিংয়ের নাম ঘোষণা করেন বাইডেন।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে ধারাবাহিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি সমর্থন উঠিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে’ ওবামার পর ইয়েমেনে হামলা চালাতে সৌদি আরবকে সমর্থন দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে গত সপ্তাহে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করে বাইডেনের প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের সাতদিনের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ ইরানের চিরবৈরী এই দুই দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কেনা এই অস্ত্র দিয়েই মূলত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাতো দেশ দুটি।
এর আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর রিয়াদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ‘পুনর্নিমাণের’ অঙ্গীকার করেছিলেন বাইডেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান প্রধান বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা পর্যালোচনা করতে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন নতুন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত এই দুই দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ এবং এর সপ্তাহখানেকের মধ্যে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি জোটের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হল।
সীমান্ত পার হয়ে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালাতে ২০১৫ সালে সৌদি আরবকে অনুমতি দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওই সময় ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশের অন্য অনেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো ইরান সমর্থিত হুথিরা। সেখান থেকেই সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয় বলে সেসময় অভিযোগ করে রিয়াদ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। ট্রাম্পের অধীনে ওয়াশিংটনের নীতি ছিল ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় এই দুই দেশকে সঙ্গে নিয়ে ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নিশ্চিত করা।
ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার কারণে ২০১৯ সালের মে মাসে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একইসঙ্গে কংগ্রেসকে পাশকাটিয়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জর্ডানের কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত অনেুমোদন করেন তিনি।
এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরবের কাছে ২৯ কোটি ডলার সমমূল্যের ছোট যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির বিষয়টি অনুমোদন করে ট্রাম্প প্রশাসন।
এদিকে ইয়েমেন শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ২০১১ সালে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইয়েমেনি কর্মী তাওয়াক্কুল কারমান।
সূত্র: এপি
টিএম