সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর দেশটির সাবেক বেসামরিক সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে সামরিক জান্তা সরকার। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) জ্যেষ্ঠ নেতা উইন থেইনকে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ইয়াঙ্গুনে নিজের বাড়ি থেকে উইন থেইনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক করা হয়েছে।

নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চি’র সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, অং সান সু চিসহ আটক করা হয় অনেক শীর্ষ নেতাকে। এছাড়া একযোগে ২৪ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকেও অপসারণ করে অভ্যুত্থানকারীরা। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি)। তবে সেই ফলাফল না মেনে সামরিক অভ্যুত্থান করায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দু’দিন পর মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চিকে দুই সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে নেয় দেশটির পুলিশ। আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে আটককৃত অন্য নেতাদের কোথায় রাখা হয়েছে তা এখন জানা যায়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্ষমতা ত্যাগ ও রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অবশ্য ইতোমধ্যেই তিনি মিয়ানমারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

বাইডেন বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিষয়ে নিজেদের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফল মুছে দেওয়া কিংবা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো শক্তির যাওয়া উচিত নয়, এটি নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

এদিকে শুক্রবার ভোরের আগে বিবিসি বার্মিজকে টেলিফোনে উইন থেইন বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করেছে। এখন তাকে (ইয়াঙ্গুন থেকে) রাজধানী নেপিদোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। অবশ্য কোন অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে- সেটা তাকে জানানো হয়নি। এনএলডির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘(আপনাদের সঙ্গে) কথা বলাকে তারা পছন্দ করছে না। আমি কী বলছি- সে বিষয়ে তারা ভীত।’

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিয়ানমারের আইনে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সোমবার সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চিকে আটক করার পর গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎকার দেন ৭৯ বছর বয়সী এই নেতা। এসব সাক্ষাৎকারে তিনি সামরিক বাহিনী ও সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লেইংয়ের তীব্র সমালোচনা করেন। এরপরই জান্তা সরকার তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দেশের সব বড় বড় শহরে টহল দিচ্ছে সেনা সদস্যরা। এছাড়া সারা দেশে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটির সবচেয়ে বড় ও জনবহুল শহর ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা তাদের হাড়ি-কড়াই ও বাসনে শব্দ করে এবং গাড়ির হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।

এছাড়া বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অল্পসংখ্যক চিকিৎসকও। এমনকি চাকরি থেকে পদত্যাগও করেছেন একজন চিকিৎসক।

পদত্যাগ করা ওই চিকিৎসকের নাম ড. নাইং তু অং। ৪৭ বছর বয়সী এই অ্যানেস্থেওলজিস্ট মিয়ানমারের সাগাইয়াং অঞ্চলের মংগুয়া হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। আবার অনেকে প্রতীকী বিভিন্ন প্রতিবাদেও অংশ নিচ্ছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, সামরিক শাসনের প্রতিবাদে মিয়ানমারের মান্দালাই শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার ছোট আকারে বিক্ষোভ করেছেন মানুষ। সেই বিক্ষোভ থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। প্রতিবাদ চলছে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও। এর জের ধরে বুধবার গভীর রাত থেকে ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মিয়ানমারে ফেসবুক খুবই জনপ্রিয়।

সূত্র: বিবিসি

টিএম