করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। এর ব্যতিক্রম নয় বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতও। করোনায় আক্রান্ত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় এবং মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে দেশটি। তবে সর্বশেষ একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে মোট জনসংখ্যার প্রতি পাঁচ জনের একজন ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর একটি সেরোলজিক্যাল সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী এই দেশের মানুষের একটি বড় অংশ সামনের দিনগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন বলেও জানানো হয়েছে ওই সমীক্ষায়। এটি আইসিএমআর’র তৃতীয় সমীক্ষা। এর আগে একই এলাকার ওপর আরও দু’টি সমীক্ষা করা হয়েছিল।

গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারির মধ্যে ভারতের ২১টি রাজ্যের ৭০টি জেলায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী ২৫ হাজার ৫৮৯ জনের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। এর দুই সপ্তাহ পর দেশটিতে করোনার টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, মোট ২১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ এসব মানুষ কোনো না কোনো সময় করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন। যা আইসিএমআর’র দ্বিতীয় সমীক্ষা থেকে ৭ দশমিক এক শতাংশ বেশি। ১০ থেকে ১৮ বছর বসয়ীদের মধ্যে এই সংখ্যাটা ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আইসিএমআর’র মহাপরিচালক বলরাম ভার্গব বলেছেন, ‘সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ভারতের প্রায় ২১ দশমিক ৪ শতাংশ নাগরিক করোনা পজিটিভ। পাশাপাশি জনগণের বড় একটা অংশ এখনও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই টিকা নেওয়া জরুরি।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘গ্রামের থেকে শহরাঞ্চলে করোনাভাইরাসে মানুষের সংক্রমণ অনেক বেশি। গ্রামীণ এলাকায় করোনায় আক্রান্তের হার ১৯ দশমিক এক শতাংশ হলেও শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই হার ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে বসতি তুলনামূলক কম এমন এলাকায় করোনায় আক্রান্তের হার ২৬ দশমিক ২ শতাংশ।’

তার মতে, দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বা এক চতুর্থাংশ ইতোমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তাদের আক্রান্তের হার ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে হসপাতালে প্রশাসনিক কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক কোটি ৮ লাখের বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন এক লাখ ৫৪ হাজার ৮২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪০৮ জন। সম্প্রতি দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের দৈনিক সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে। তবে আইসিএমআর বলছে, দৈনিক সংক্রমণ যতই নিয়ন্ত্রণে আসুক, করোনাকে অগ্রাহ্য করার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি। আর তাই মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোওয়ার মতো অভ্যাসগুলোতে শিথিলতা প্রদর্শন করা উচিত নয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলেও সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমে হয়েছে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজারে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম