সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ঘোষণার ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা।
বারের নির্বাচিত বিএনপিপন্থি সদস্যরা বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল গতকালের বিশেষ সাধারণ সভা স্থগিত করেছেন। কোনো ধরনের আলোচনা বা সেখানে সভাপতি পদে কোনো নির্বাচন হয়নি। অন্যদিকে, সমিতির আওয়ামীপন্থি অংশ দাবি করেছে, গণতান্ত্রিকভাবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে এ এম আমিন উদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৫ মে) দুপুরে আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেন, সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি পদ পূরণের বিধান রয়েছে। সে লক্ষ্যে উক্ত পদ পূরণের জন্য করণীয় ঠিক করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল ৪ মে সমিতির অডিটোরিয়ামে বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল। ওই সভায় সভাপতির অনুপস্থিতিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন সভাপতিত্ব করবেন এটি ছিল স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমিতির অপর সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজেকে বিশেষ সাধারণ সভার সভাপতি হিসেবে দাবি করলে উপস্থিত সদস্যরা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব কে করবেন বিষয়টি সুরাহা করে সভা শুরুর জন্য সম্পাদককে অনুরোধ জানান। এ পর্যায়ে সভাপতিত্ব কে করবেন এ বিষয় নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সভার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বিজ্ঞাপন
কাজল বলেন, কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভার কাজ মুলতবি করা হয়। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, সভা মুলতবি করার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সম্পাদকসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতির পদ পূরণ করব।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করলাম, কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা পরবর্তী সময়ে অতি উৎসাহী হয়ে সমিতির সভাপতির কক্ষে নিজেই সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতিকে (এ এম আমিন উদ্দিন, বর্তমানে অ্যাটর্নি জেনারেল) ২০২১-২২ সালের বাকি মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। যা সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধী।
বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই বিশেষ সাধারণ সভা সম্পাদক স্থগিত করেছেন। কোনো ধরনের আলোচনা কিংবা সেখানে সভাপতি পদে কোনো নির্বাচন হয়নি। এছাড়া বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল সভাপতি পদ পূরণে করণীয় নির্ধারণের জন্য, নির্বাচনের জন্য নয়। এ সময় বিএনপির প্যানেল থেকে নির্বাচিত আইনজীবী সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটির পাঁচ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এর পরই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সমিতির আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা। তিনি বলেন, বারের গঠনতন্ত্র ১৬ ধারা অনুযায়ী সভাপতি পদে যেভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে তা যথাযথ। বিশেষ সাধারণ সভায় এ এম আমিন উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করা হয়, সেখানে অন্য কারও নাম উচ্চারণ না হওয়ায় তিনি সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সভাপতি পদে নতুন করে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরাসরি এ পর্যায়ে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সুযোগ গঠনতন্ত্রে নেই।
এ সময় আওয়ামীপন্থি প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমিতির ছয় জন কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে এ পদের পূরণে করণীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার (৪ মে) বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় নির্ধারিত সময়ে সভার শুরুতে সভাপতিত্ব নিয়ে আওয়ামী এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। এ অবস্থায় সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন, বারের সংবিধান অনুযায়ী আমি এ সভা পরিচালনা করব। তখন এক পক্ষ বিরোধিতা শুরু করলে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা ডায়েসে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন।
তখন কাজল বলেন, ওনাকে সভাপতিত্ব করার কোনো কার্য বিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহ-সভাপতি আছেন। তখন শফিক উল্লাহ বলেন, আমি আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তখন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা তাকে সমর্থন দেন। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করতে থাকেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, কণ্ঠ ভোট নয়, নির্বাচন চাই। এক পর্যায়ে মিলনায়তনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। মঞ্চের ওপর ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
তখন সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সাধারণ সভা করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি না থাকায় সভা মুলতবি করা হলো।
প্রসঙ্গত, গত ১০-১১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের ভোটে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। আর রুহুল কুদ্দুস কাজল টানা দ্বিতীয়বার সম্পাদক নির্বাচিত হন। গত ১২ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মতিন খসরু হাসপাতালে থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ এপ্রিল মারা যান।
এমএইচডি/এফআর