বসন্ত সর্বজনীন প্রাণের উৎসবে রূপ নিচ্ছে
বসন্ত উৎসবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, পহেলা বৈশাখ দল-মত-নির্বিশেষে বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। শহর-নগর-বন্দর থেকে শুরু করে গ্রামের পাড়া-মহল্লা সর্বত্র ধনী-গরীব সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাণের এ উৎসবে মেতে ওঠে। সে ধরনের প্রাণের উৎসবে রূপ নিচ্ছে বসন্ত উৎসব।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘বসন্ত উৎসব ১৪২৭ বঙ্গাব্দ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। একাডেমির নন্দনমঞ্চে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
কে এম খালিদ বলেন, বরাবর ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব উদযাপিত হলেও গত বছর বাংলা একাডেমির সংশোধিত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্ত উৎসব এখন থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হবে।
চল্লিশোর্ধ্ব সবাইকে দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় সদস্য ও সর্বমোট সপ্তম ব্যক্তি হিসেবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকা গ্রহণ করেছি। এটি ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত একটি নিরাপদ টিকা। আমরা করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি কিন্তু এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারিনি। সেজন্য সবাইকে এখনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব মো. নওসাদ হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে দেশবরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সমবেত সংগীত, নৃত্যানুষ্ঠান ও ব্যান্ডসংগীত পরিবেশিত হয়।
গত বছরও ভালোবাসা দিবসেই পালিত হয়েছিল পহেলা ফাল্গুন। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, এর আগে বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে এবারও পড়েছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
যে কারণে একই দিনে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস
প্রতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব পালিত হত। কিন্তু গত বছর বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে। ওই পঞ্জি অনুযায়ী, বসন্ত উৎসব গতবার থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে। এবারও একইভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারাবিশ্বে। তাই বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়েছে দিবস দুটি।
বাংলা একাডেমির তথ্য অনুসারে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই সেভাবেই সাজানো হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। যে কারণে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়েছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
যেভাবে উদযাপন শুরু হলো ‘বসন্ত উৎসব’
প্রাচীন আমল থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করেছেন। জানা গেছে, সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আকবরি সন প্রবর্তন করেন। সে সময় তিনি প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব।
১৯০৭ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে শান্তিনিকেতনে যাত্রা শুরু করে বসন্ত উৎসব, যা ‘ঋতুরঙ্গ উৎসব’ নামে পরিচিত। ১৪০১ বঙ্গাব্দে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় শুরু হয় বসন্ত উৎসব।
এএসএস/এসএসএইচ