প্রেসক্লাবে আবুল মকসুদের জানাজা অনুষ্ঠিত
জাতীয় প্রেসক্লাবে দুপুরে আবুল মকসুদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে
বাংলাদেশের খ্যাতিমান কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে তার মরদেহ প্রেসক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে আনা হয়। পরে সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ২টা ৪৫ মিনিটে আবুল মকসুদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের ইমাম মাওলানা মনিরুজ্জামান।
জানাজার নামাজের আগে সৈয়দ আবুল মকসুদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে এখানে হাজির হয়েছি। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন, তিনি প্রেসক্লাবের পুরনো সদস্য। তার মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, জাতির জন্য এটা কষ্টের। আবুল মকসুদ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে লিখতেন। জাতিকে তার আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিলো। অনেক সাদামাটা জীবনযাপন করতেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এ সময় আবুল মকসুদের ছেলে নাসিফ মকসুদ বলেন, জীবনের বেশিরভাগ সময় মানুষের কল্যাণে তিনি লিখতেন। হঠাৎ প্রয়াণে হতবিহ্বল হয়েছি।
তার নামাজে জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান, বিএনপির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন। এছাড়াও আবুল মাকসুদের জানাজায় সর্বস্তরের সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।
বিজ্ঞাপন
জানাজা শেষে তার মরদেহে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং পিআইবির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রেসক্লাবে জানাজা শেষে দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে আবুল মকসুদের মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান সৈয়দ আবুল মকসুদ। পরে তার প্রথম নামাজে জানাজা ওইদিন রাত ১০টায় ধানমন্ডির মসজিদে তাকওয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরদেহ রাতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে রাখা হয়। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সমাজের বিশিষ্টজনরাও তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যু আমাদের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি সৈয়দ আবুল মকসুদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অপর এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর। তিনি তার গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত। তার প্রবন্ধগুলো দেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর। জার্নাল অব জার্মানি তার লেখা ভ্রমণকাহিনী। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
এমএইচএন/এমএইচএস