মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু

রাজধানীতে যাত্রীবেশে ভাড়ায় চালিত সিএনজিতে উঠে অন্য যাত্রীর সবকিছু ছিনতাই করছে একটি চক্র। কখনও কখনও অপহরণের পর ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করছে চক্রটি।

গত ১ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলের অফিস থেকে সানারপাড় যেতে সাংবাদিক এস এম নজরুল ইসলাম হিরা (৫২) সিএনজিতে ওঠার পর প্রথমে ছিনতাইয়ের শিকার হন। পরে তাকে জিম্মি করে পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

ওই ঘটনায় ছিনতাইচক্রের মূলহোতা মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজুকে (৩০) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) ভোরে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বসুন্ধরা রিভার ভিউ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিম। 

গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সাংবাদিক এস এম নজরুল ইসলাম হিরা গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় তার মতিঝিলের অফিস শেষে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে শাপলা চত্বরের উত্তর পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর একজন সিএনজিচালক তাকে ৪০ টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে ওঠান। 

সিএনজিতে আগে থেকেই দুজন বসা ছিলেন। দুই যাত্রীর মাঝে তাকে বসানো হয়। সিএনজিটি রাত সাড়ে ৭টায় ওয়ারী থানার এস আলম গ্রুপের গ্যারেজের সামনে পৌঁছালে সিএনজিতে থাকা দুজন তাকে মারধর করেন এবং চোখ ও দুই হাত বেঁধে ফেলেন। এরপর তার কাছে থাকা একটি স্বর্ণের আংটি, একটি রাডো ঘড়ি, একটি মোবাইলফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন।

এরপর তারা অপহরণের ভয় দেখিয়ে তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে রাত পৌনে ৯ টায় তাকে পোস্তগোলা সড়কে ফেলে চলে যান। এ ঘটনায় গত ৪ অক্টোবর ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তিনি।

এ ব্যাপারে গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্তি উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী জানান, দায়ের করা মামলাটি থানার পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিম। তদন্তে  বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়।

ছিনতাইচক্রের মূলহোতা গ্রেফতার তাজু ছিনিয়ে নেয়া মোবাইলের বিকাশ একাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করাসহ তার সহযোগীদের বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছেন। তার সহযোগীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার তাজু ও তার সহযোগীরা  সিএনজিযোগে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও গেন্ডারিয়া এলাকায় যাত্রীবেশে ছিনতাই করে। এক্ষেত্রে ছিনতাইকারীরা একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে। টার্গেটকে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়ার জন্য ভাড়া নিয়ে কথা বলে। ভাড়া ঠিকঠাক হলে গাড়িতে তুলে তার গন্তব্যে রওনা দেয়। 

যাত্রীবেশে থাকা তাজুর সহযোগীরা কিছুদুর গিয়ে তাদের সুবিধাজনকস্থানে টার্গেটকৃত যাত্রীকে ভয়ভীতি ও মারধর করে টাকাপয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।

পরে ভিকটিমের মোবাইলফোন দিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ আদায় করতে ব্যর্থ হলে ভিকটিমকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাজধানীর বাইরে নিরব ও নির্জন জায়গায়  ফেলে দেয়।

গ্রেফতার তাজুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন তিনি কারাভোগ করেছেন। গ্রেফতার তাজুকে ওয়ারী থানার মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জেইউ/এইচকে