উপকূলীয় অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত চারটি প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে ২৬ লাখ থেকে ১৪০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির এসব তথ্য উঠে এসেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায়। শতকরা হিসেবে এই আর্থিক ক্ষতির হার ১৪ দশমিক ৩৬ থেকে সর্ব্বোচ্চ ৭৬ দশমিক ৯২ ভাগ পর্যন্ত। 

বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়: ঘূর্ণিঝড় আমফানসহ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারণে যথাযথভাবে ঝুঁকি যাচাই না করা এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। 

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে বক্তব্য রাখেন। গবেষণা পরিচালনা ও প্রতিবেদন প্রণয়নে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ, জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন) মোঃ নেওয়াজুল মওলা। সদস্যরা হলেন- অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার কাজী আবু সালেহ ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ মাহ্ফুজুল হক প্রমুখ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারণে যথাযথভাবে ঝুঁকি যাচাই না করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। যথাযথভাবে ঝুঁকি যাচাই না করেই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করায় বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এই স্থাপনাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পর ক্ষেত্রবিশেষে তা প্রভাবশালীদের দখলে রাখা ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। 

এছাড়াও, সব দুর্যোগের সময়েই বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণের সুবিধাভোগী তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণে অনিয়ম দেখা গেছে। জনপ্রতিনিধি কর্তৃক স্বজনপ্রীতিসহ রাজনৈতিক বিবেচনায় উপকারভোগী তালিকা প্রণয়ন, ত্রাণ বিতরণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর সংস্কারে ঢেউটিন ও টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের থেকে অনৈতিক অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। 

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় আরো বলা হয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম) কর্তৃক ২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে শুকনো খাবার ক্রয়ের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয়নি। একজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মানহীন ঢেউটিন সরবরাহের অভিযোগে দুদকে মামলা চলমান থাকা স্বত্ত্বেও কার্যাদেশ প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে।

উপকূলীয় বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়ম ও দুর্নীতি মধ্যে রয়েছে, আশাশুনিতে চিংড়ি চাষের জন্য বেড়িবাঁধ কাটা সংক্রান্ত ৩৬০টি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার পিছনে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের সাথে পাউন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেন ও পারস্পরিক যোগসাজসের অভিযোগ করেন স্থানীয় জনসাধারণ। 

পছন্দের ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে পাউবো কর্মকর্তা অতিরিক্ত প্রাক্কলন করে দরপত্র আহবান, কাজ প্রাপ্তির পর অতিরিক্ত প্রাক্কলনের টাকার অংশ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে ভাগাভাগির অভিযোগও রয়েছে। রাস্তা নির্মাণে শ্যামনগরের গাবুরায় শিডিউল অনুযায়ী পুরনো বেড়িবাঁধের উচ্চতা আগের চেয়ে ৩ ফুট বাড়ানোর কথা থাকলেও তা না করার অভিযোগ রয়েছে। 

এছাড়াও ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে নিম্নমানের সিসি ব্লক স্থাপন, প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, খুলনা ও সাতক্ষীরায় নদী খনন প্রকল্পে সঠিক পরিমাণে নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।

দুর্যোগ মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিতে মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত আগের গবেষণাগুলোর সুপারিশ আমলে না নেওয়া ও তা বাস্তবায়ন না করায় সাম্প্রতিক দুর্যোগেও আগের চিহ্নিত ঘাটতিসমূহের পুনরাবৃত্তি ঘঠেছে। 

গবেষণা প্রতিবেদন ১২টি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

আরএম/ওএফ