চলতি বছরে ১৮ হাজারের বেশি নারী ও শিশু সংক্রান্ত মামলা
করোনাকালেও নারী ও শিশু নির্যাতনের মাত্রা প্রতিমাসে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির এক হিসেব অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশে শুধুমাত্র নারী ও শিশু সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা আনুমানিক ১৮ হাজার ২২১টি। এটি একটি উদ্বেগের বিষয়।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের বর্তমান প্রেক্ষাপট ২০২০: বিশ্লেষণ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী এসব তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
সালমা আলী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে করোনার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের মাত্রা প্রতিমাসে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে বিশ্বব্যাপী। সময়ের সাথে সাথে সহিংসতার রূপ পরিবর্তিত হচ্ছে। এই সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের নারী ও শিশুরা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ১১টি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে
• ধর্ষণের মুখোমুখি নারী ও শিশুদের জন্য সার্বিক আইনি সহযোগীতার ব্যবস্থা কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে সুরক্ষা বলয় নিশ্চিত করা
• দ্রুত বিচার এবং সাক্ষী সুরক্ষার পাশাপাশি আধুনিক ফরেনসিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেসগুলোর যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করা
• তদন্তকার্য রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সকল স্তরে প্রশিক্ষিত কর্মী থাকতে হবে
• উচ্চ আদালতে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত সকল মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রত বিচার সম্পন্নের জন্য পৃথক কোর্টের ব্যবস্থা করা
• মানবপাচার সংক্রান্ত মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার সম্পন্নের জন্য ট্রাইবুনালের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে
• প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের সামগ্রিক তথ্য ও উপাত্ত সংরক্ষণের জন্য যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
• প্রান্তিক গোষ্ঠীর (প্রতিবন্ধী, হিজড়া) জন্য বৈষম্যহীন আইনি পরিষেবা নিশ্চিত করা
• আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শ্রম পরিদর্শকরা এবং অভিবাসন কর্মকর্তাসহ কর্মকর্তাদের পাচারের মামলার সনাক্তকরণ এবং পরিষেবাগুলোতে ভুক্তভোগী রেফারেলসহ প্রশিক্ষণ বাড়ানো
• কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকরী কমিটি গঠন করতে হবে
• নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনে সকল ধরনের ধর্ষণকে আইনের আওতাভুক্ত করার জন্য পেনিট্রেশনের একটি সংজ্ঞা যুক্ত করতে হবে। যাতে করে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির যোনি, মলদ্বার বা মুখে যৌনাঙ্গ পেনিট্রেশনসহ বিভিন্ন বস্তুর বা অপরাধীর শরীরের অন্যান্য অঙ্গের পেনিট্রেশন অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলার বিচারে অভিযোগকারীর চরিত্রগত সাক্ষ্যের গ্রাহ্যতা বন্ধ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোবায়দা পারভিন, সমিতির নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট জাকিয়া আনার কলি প্রমুখ।
এমএইচএন/এনএফ