শাহবাগ অবরোধ

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’র নেতা-কর্মীরা।

সোমবার (২৮ই ডিসেম্বর) দুপুরে সংসদের ঢাকা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী এ অবরোধ করেন।

এতে আশপাশের সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। কাঁটাবন ও শাহবাগ এবং বাংলামোটর অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একঘন্টা পর পুলিশের বাধায় অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। তবে আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

অবরোধে ঢাকা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান মিয়া বলেন, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি উঠলেও কোটা বাতিল করা হয়েছে। কোটা সংস্কারে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার্থে সব পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করতে হবে।

সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুরক্ষা আইন পাসের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে মৃত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের একজন প্রতিনিধিকে ভোটার করতে হবে। ১৯৭২-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে ভুয়াদের বাদ দিতে হবে।

শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি

দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিল

মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। পরের দিন জারি হয় পরিপত্র। এর মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটা ব্যবস্থা ছিল তা বাতিল হয়ে যায়।

পরিপত্রে বলা হয়, সব সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে এবং বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।

সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় জোরালো আন্দোলন। আন্দোলন চলাকালে দুই দফায় পুলিশ সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি থাকলেই এ ধরনের আন্দোলন হবে, বার বার হবে। প্রতিবন্ধী বা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী যারা আছেন, তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামেন। পরে ছাত্রলীগও আন্দোলনকারীদের মারধর করে। ওই বছরের ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সচিবদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়। ৫ অক্টোবর জারি হয় পরিপত্র।

এদিকে, সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়সহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। তাদের আন্দোলন এখনও চলছে।

আমজাদ হোসেন হৃদয়/এসআরএস