মাল্টা, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মিসর, কম্বোডিয়াসহ ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশীদের টার্গেট করত তারা। মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আগ্রহীদের অবৈধ এজেন্সির মাধ্যমে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়াই প্রথমে ভিজিট ভিসায় ল্যান্ড চেকপোস্টের মাধ্যমে ভারতে পাঠানো হত। এরপর নৌপথে শ্রীলঙ্কার জঙ্গলে।

চাকরির কথা বলে ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশত্যাগের পরই পাচারকারীদের ফাঁদে পড়েন তারা। এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর তদন্তের ভিত্তিতে সত্যতা মিললে চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকা মেট্রোপলিটনের একটি দল।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- হাবিবুর রহমান (৫১), মামুনুর রশিদ মামুন (৪১), জামাল হোসেন (৪০) ও নাহিদুল ইসলাম পলাশ (৪৫)।

এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ২৮টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দূতাবাস, ব্যাংক ও এজেন্সির ১৯টি সিলমোহর ও কম্বোডিয়ার ১০টি জাল ভিসা উদ্ধার করা হয়।

বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়াই ছাড়া প্রথমে ভিজিট ভিসায় ল্যান্ড চেকপোস্টের মাধ্যমে ভারত পাঠানো হতো। এরপর ভারত যাওয়া লোকদের থেকে পাসপোর্ট নিয়ে ভুয়া ভিসা দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে নানাভাবে টাকা সংগ্রহ করত। যারা টাকা দিতে পারতো না তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন করে টাকা আদায় শেষে জঙ্গলে ছেড়ে দিতো।

শেখ ওমর ফারুক, অতিরিক্ত ডিআইজি, সিআইডি

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এই সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের দালালদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এছাড়াও এই সংঘবদ্ধ চক্রটি ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে জাল ভিসা সরবরাহ করে। তারা ঘন ঘন অফিস ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে আত্মগোপনে চলে যায়।

পাচারের পর কোনোরকম জীবন নিয়ে দেশে ফেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার হাতুড়াবাড়ি গ্রামের আহসান হাবীব সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বলেন, মাল্টা পাঠানোর কথা বলে ১২ লাখ টাকার চুক্তি হয়। দালালরা প্রথমে বাংলাদেশ থেকে আট লাখ টাকা নেয়। এরপর ভারতে হায়দারাবাদে নিয়ে নির্যাতন করে আরো চার লাখ টাকা আদায় করে জঙ্গলে ফেলে দেয়। পরে তিনি স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় দেশে ফিরেন।

সিআইডি কর্মকর্তা শেখ ওমর ফারুক বলেন, আমরা বিভিন্নসূত্রে জানতে পেরেছি ছয় থেকে সাত বছর ধরে তারা এ কাজ করছে। চক্রটি শতাধিক লোক পাচার করেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে আমরা এখনও সেসব ভিকটিমদের সন্ধান পাইনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের প্রথমে বিআরটিসি বাসে বেনাপোল নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের আবারো বাসে কলকতা নেওয়া হয় পরে ট্রেনে করে হায়দারাবাদ। এরপর ট্রলারে করে নেওয়া হয় শ্রীলঙ্কায়। সেখানে জঙ্গলে ফেলে নির্যাতন করে টাকা আদায় করা হতো।

ভিকটিমেরা সেখান থেকে পালিয়ে শ্রীলঙ্কার স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। পরিবার থেকে টাকা পাঠালে দেশে ফিরে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শরণাপন্ন হয় এসব ভিকটিমরা।

কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া। তাদের কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেই।

সংশ্লিষ্ট দেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, সব দেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সিআইডির ঢাকা মেট্রোপলিটন পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মিডিয়া) জিসানুল হক ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রতন কৃষ্ণ নাথ।

জেইউ/ওএফ