বনানী-কাকলী সড়কের যানজটের চিত্র

এক সড়কে মেট্রোরেলের কাজ, আরেক সড়কে ইউলুপ। সকালে রাস্তা খোলা, বিকেলে বন্ধ। আবার রাতে খোলা, সকালে বন্ধ। এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলছে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম। নিয়মিতই তীব্র আকার ধারণ করছে ঢাকার যানজট। ঢাকার সড়কে সড়কে যানজটের বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ বলছে, উন্নয়নকাজ শেষ না হলে যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না!

ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে ওয়ানওয়ে রোড, ডাইভারশন দেওয়া, ম্যানুয়ালি সিগন্যাল পরিচালনা করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। এগুলোতেও কাজ না হওয়ায় সড়ক নিরাপত্তা আইনে ট্রাফিকের মামলা দেওয়ার বিষয়েও কঠোর হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ জানায়, ইতোমধ্যে রাজধানীর প্রায় ৫০-৬০টি পয়েন্টে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত সার্জেন্টরা মাঠে থাকেন। গাড়ির কাগজপত্র-লাইসেন্সসহ কেউ যাতে উল্টোপথে চলে বা সড়কে গাড়ি পার্কিং করে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্যও উচ্চ জরিমানার মামলা দিচ্ছেন তারা। তবে কোনটিতেই যেন কাজ হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ঢাকার ট্রাফিক অবস্থা।

সৈয়দ সাহাবউদ্দিন নামে এক উবার মটো রাইডার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সাধারণত দিনের বেলায় পুরো ঢাকাশহরেই ট্রিপ দেই। ২০২০ সালের মার্চে করোনাকালের আগের রাজধানীতে প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতো। এরপর যানজট কিছুটা কমে। তবে বর্তমানে আবারও আগের মতো যানজট হচ্ছে। যেখানে আমি মগবাজার থেকে বিমানবন্দরে মোটরসাইকেলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটে যাই, সম্প্রতি এ রুটে যেতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। একবার কোনো সড়কে জ্যাম শুরু হলে সারাদিনই ওই জ্যাম লেগেই থাকে।

সিনিয়রদের মাঠে রেখেও কাজ হচ্ছে না
২০১৯ সাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) থেকে ঊর্ধ্বতন সদস্যদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেন তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এরপর থেকেই প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ঊর্ধ্বতনরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের কনস্টেবল ও সার্জেন্টদের কাজ মনিটরিং করছেন। রাস্তায় যানজট বেড়ে গেলে অনেকসময় তাদেরও হাত নেড়ে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ খোদ ট্রাফিক বিভাগ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপাতত ঢাকা শহরে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রোজেক্টের কাজ চলছে। তাদের মধ্যে মেট্রোরেল (এমআরটি), বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বেশ কয়েকটি ইউলুপ তৈরির কাজ চলছে। নির্মাণকাজের কারণে অনেক সড়ক এমনিতেই বন্ধ রয়েছে, এরওপর অনেক সড়কের মধ্যে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে, এসবের কারণে কোনভাবেই যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। উন্নয়নকাজ চলার সময় নগরবাসীর কিছুটা কষ্ট হবে, তবে এগুলো শেষ হলে আশা করছি যানজট পুরোপুরি কমে যাবে।

ইউলুপ/ইউটার্ন যেখানে অভিশাপ
রাজধানীর যানজট নিরসনে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও বিজি প্রেসের সামনে, নাবিস্কো মোড় এবং বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় নতুন ধরনের তিনটি ইউটার্ন চালু করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে এ ইউলুপের কারণেই পুলিশ ও সড়কে চলাচলকারীদের অভিযোগ— ’তিনটি ইউটার্নে যানজট কমেনি বরং বেড়েছে’। যানজট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে বন্ধ করে দেওয়া হয় বনানীর ইউটার্নটি।

যানজট নিরসনে কখনো আমরা ওয়ানওয়ে সড়ককে টু-ওয়ে করে দিচ্ছি, কখনো উল্টো কাজ করছি। যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই করা হচ্ছে, পরিস্থিতি বুঝে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আমরা যখন দেখলাম বনানীর ইউটার্নে যানজট কমার বদলে আরও বেড়ে গেল, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

মিনহাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট-গুলশান বিভাগ

কোন পদক্ষেপ কাজে আসছে না ব্যস্ততম গুলিস্তানে
হকার তুলে, ডাইভারশন দিয়ে উদ্যোগই কাজে আসছে না গুলিস্তান-মতিঝিলের জ্যাম নিয়ন্ত্রণে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়াহেদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কে যানজট কমাতে আমরা মতিঝিলের দুইটি উদ্যোগ নিয়েছি। মতিঝিল-গুলিস্তানে হকার বসার কারণেই মূলত যানজট হয়। যদিও ফুটপাতের হকার তুলে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না, তবে আমরা সড়কে কোনো ধরনের হকার বসতে দিচ্ছি না। সড়ক ফাঁকা রেখে যানচলাচলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মেট্রোরেলের কাজের কারণে সপ্তাহে সপ্তাহে সড়কে ডাইভারশন দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ নির্মাণকাজের শ্রমিকদের মোটিভেট করে দ্রুত কাজ সম্পন্নের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও বিভিন্ন সড়কে বাম লেনটা কার্যকরের পরিকল্পনা করে যাচ্ছি।

এআর/এসএম