দেয়াল লিখনে ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের প্রতিবাদ

রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের দেয়ালে নানা ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর অধিকাংশই ছিল ধর্ষণের পর ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের বিরুদ্ধে।

রোববার (১৭ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী, আনুশকার সহপাঠী ও কয়েকটি সংগঠনের সদস্যসহ মোট ২৫-৩০ জন দেয়াল লিখনে অংশ নেয়।

দেয়াল লিখনে ভিক্টিম ব্লেমিং বন্ধ করা, আনুশকার ধর্ষকের বিচার দাবি, সেক্স এডুকেশন বাধ্যতামূলক করার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

দেয়াল লিখনের অন্যতমগুলো হচ্ছে ‘চলছে চলবে, প্রীতিলতাদের সংগ্রাম’, ‘এ দায় আমার নয়, নয় চলন বলন জামার, এই দায় শুধু তোর, তুই ধর্ষক’, ‘অর্ণা হত্যার বিচার চাই’, ‘ডোন্ট রেপ, ডোন্ট গেট রেপড’ (ধর্ষণ নয়, ধর্ষণের শিকার নয়), ‘মেক সেক্স এডুকেশন কম্পোলসারি’ (যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক চাই), ‘পাল্টা আঘাত’, ‘স্টপ রেপ কালচার’।

দেয়াল লিখনে আনুশকা ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদ

দেয়াল লিখনে অংশ নেওয়া তৌসিফ ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের দেয়াল লিখন দিয়ে প্রতিবাদী লেখা শুরু হয়েছে। রাতব্যাপী স্কুলের আশপাশের বিভিন্ন দেয়ালে চলে এই লিখন। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদী দেয়াল লিখনে অংশ নিয়েছে। আমরা আনুশকা হত্যার বিচারে কোনো আপোষ না করে সংগ্রাম চালিয়ে যাবো, রাজপথে থাকবো। সবাইকে আমাদের সঙ্গে থাকার বার্তার অংশ হিসেবেই এই দেয়াল লিখন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, সমাজের মেয়েরা যাতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে না পরে, যাতে তারা ‘পাল্টা আঘাত’ করে একারণে এসব ছবিটা আঁকা।

দেয়াল লিখনে অংশ নেওয়া জান্নাত নামের একজন জানান, আমাদের মধ্যে প্রথা আছে ধর্ষণের কারণ হিসেবে আমরা ভিক্টিম ব্লেমিং করি। তবে আমাদের এটা মানতে হবে যে, ধর্ষণ মেয়েদের দোষে হয় না। এটা হয় ছেলেদের দোষে, তাদের মানসিকতার দোষে।

আনুশকা ধর্ষণ-হত্যার বিচার দাবি 

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন রোডে নিজ বাসায় নিয়ে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ করেন দিহান। পরে আনুশকা অচেতন হয়ে গেলে তাকে কলাবাগানের আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনুশকাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার দিন রাতে কালবাগান থানায় দিহানকে আসামি করে মামলা করেন আনুশকার বাবা মো. আল আমিন। আনুশকাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ২ ধারায় মামলাটি করা হয়। পরদিন ৮ জানুয়ারি দিহানকে আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

ওইদিন বিকেলে আনুশকার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেসনিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে আনুশকার মৃত্যু হয়েছে। তার যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ দুই দিক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ময়নাতদন্তে দেহের দুই অংশেই আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ধস্তাধস্তির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

এআর/এসআরএস