বৈরালী, বালাচাটা, আঙ্গুস, জাতপুঁটি, দাতিনা। মাছগুলো নাম শুনলেই মনে হয় খাল-বিলে বেড়ে ওঠা প্রাকৃতিক মাছ। যা আজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। বাজারে দেশি মাছ হিসেবে খ্যাতি ও কদর থাকলেও খুব বেশি পাওয়া যায় না।

তবে এখন থেকে পুকুরে চাষ করা যাবে এসব প্রাকৃতিক ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছ। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে এসব মাছের আধিক্য দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে। প্রাকৃতিক এসব মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা পেয়েছেন দেশের মৎস্যবিজ্ঞানী ও গবেষকরা।

আলাপকালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কৃত্তিম প্রজনের মাধ্যমে বৈরালি, বালাচাটা, আঙ্গুস, জাতপুঁটি, দাতিনা মাছের পোনা উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন দেশের মৎস্যবিজ্ঞানীরা। এছাড়া ঘরোয়াভাবে আমরা এসব মাছ চাষে সফলতা পেয়েছি। এখন মাঠ পর্যায়ে বিস্তৃতির সময় এসেছে।

কবে থেকে এসব মাছ পুকুরে চাষ শুরু করা জানে জানতে চাইলে ড. ইয়াহিয়া খান বলেন, খুব শিগগিরই আমরা পোনা দিতে পারব চাষিদের কাছে। তবে শুরুতে আমরা নিজেরা এবং কিছু চাষিদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে মাছগুলো চাষ করব। যেন ভবিষ্যতে চাষিরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি না হন।

এসব মাছ নিয়ে গবেষণার কারণ হিসেবে এ মৎস্যবিজ্ঞানী বলেন, বাংলাদেশের মিঠা পানিতে বিশেষ করে বিল, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা, খাল-বিল, প্লাবনভূমি ও ধানক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে এসব মাছ পাওয়া যেত। খাদ্য তালিকায় মাছগুলো খুবই পছন্দের। কিন্তু জলাশয় সংকোচন, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, কৃষিকাজে কীটনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার, পানি দূষণ এবং অতি আহরণের ফলে বা পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে এসব মাছের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হয়েছে। এখন এ মাছ নেশি পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, এসব মাছের বাজারমূল্য অনেক। এছাড়া প্রান্তিক শ্রেণির মানুষেরাও এসব মাছ সহজেই পেতে পারেন। চাইলে কেউ খাল-বিল বা বাড়ির পাশে নালায় মাছগুলো চাষ করতে পারবেন। এর বাইরে এসব মাছের শুঁটকি করেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই এসব মাছ নিয়ে গবেষণা এখন সময়ের দাবি।

ড. ইয়াহিয়া খান বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ স্বাদুপানি কেন্দ্র দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় এসব মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছে। বর্তমানে জীনপুল সংরক্ষণে গবেষণা চলছে। প্রযুক্তি প্রমিতকরণের মাধ্যমে এ বছর ব্যাপক পোনা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

একে/এইচকে