স্বামী এরশাদ দ্বিতীয় বিয়ে করায় চাপে পড়েন গৃহকর্মী রেখা। ৫০ হাজার টাকা ধার-দেনা করে দিলেও আবারও টাকার জন্য রেখাকে চাপ দেয় এরশাদ। টাকা জোগাড় করতে মরিয়া রেখা আকতার মালিবাগের গৃহকর্ত্রীর মা বিলকিস বেগমকে প্রথমে বেধড়ক পেটায় ও এরপর বটি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তেড়ে আসে। এরপর বৃদ্ধাকে বাধ্য করে চাবি দিয়ে আলমারি খোলায় এবং স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও টিভিসহ মোট ২১ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে সটকে পড়ে ‘ভয়ঙ্কর’ গৃহকর্মী রেখা আকতার।

এসব চিত্র ধরা পড়ে মালিবাগের ওই বাসায় লাগানো সিসি ক্যামেরায়। পরে পরিবারের সদস্যরা এসে আহত বৃদ্ধা বিলকিস বেগমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। ওই ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা মামলায় প্রথমে স্বামী এরশাদকে রাজধানীর সবুজবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভোর ৫টার দিকে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পলাতক গৃহকর্মী রেখা আকতারকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, ভয়ঙ্কর এ ঘটনা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটিয়ে পালিয়ে যায় গৃহকর্মী রেখা। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল মারধর ও হত্যা চেষ্টার মধ্যদিয়ে আতঙ্কিত করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়া।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন।

তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি বোন দিলরুবা জামান, মা বিলকিস বেগম ও গৃহকর্মী রেখা আকতারকে রেখে রাজধানীর মালিবাগের বাসা থেকে অফিসের কাজে বরিশাল যান মেয়ে মেহবুবা জামান। সকালে ব্যাংকের কাজে বাইরে যান দিলরুবাও। এ সুযোগে প্রথম ঠান্ডা পানি দিয়ে বিলকিস বেগমকে গোসল করান। এরপর ঘরে এনে বিবস্ত্র করে লাঠি দিয়ে বেধম পেঠানো হয় তাকে। মাঝে বটি দিয়ে মারতে তেড়ে আসেন। বুকের ওপর চেপেও বসেন। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। পরে তাকে বাধ্য করা হয় বাসার আলমারি খুলে দিতে। এরপর আলমারি থেকে স্বর্ণাঙ্কার, টিভি ও নগদ টাকাসহ মোট ২১ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে সটকে পড়ে গৃহকর্মী রেখা। যাবার সময় বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যায়। এরপর সে স্বামীর সঙ্গে দেখা করে। স্বামী এরশাদকে নগদ টাকা ও টিভি দিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

সদ্য পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার এ কর্মকর্তা বলেন, পরে বাসার লোকজন ফিরে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও এখন আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন। এরপর বৃদ্ধার মেয়ে মেহবুবা জামান শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

গত ১৮ জানুয়ারি গৃহকর্মীর রেখার নির্যাতনের ওই ঘটনা রুমের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। নির্যাতনের সেই ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় ও সবার মনে দাগ কাটে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে বিবস্ত্র করে লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করছে। বৃদ্ধা আর্তনাদ করছেন এবং এক পর্যায়ে তার মাথা দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। পরে বৃদ্ধাকে দিয়ে আলমারি খুলিয়ে সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে জড়ো করতে দেখা যায় তাকে। নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নিয়ে তাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেও দেখা যায়।

এ ব্যাপারে ওয়ালিদ হোসেন বলেন, এক বছর আগে মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনে মেয়েটিকে বাসায় কাজে রাখা হয়েছিল। এই অপকর্মটি সে হঠাৎ করেনি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করেছেন। এ ভয়ঙ্কর ঘটনার সঙ্গে রেখার স্বামী এরশাদেরও যোগসাজশ খোঁজা হচ্ছে। কারণ পালানোর পর এরশাদকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে চোরাই স্বর্ণালঙ্কার নগদ টাকাসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করা হয়। এ থেকে স্পষ্ট ঘটনায় তার যোগসাজশ ছিল।

রেখাকে গ্রেপ্তার সম্পর্কে পুলিশ জানায়, রেখার নির্যাতনের ওই ভিডিও ভাইরাল হবার পর রেখাকে ধরতে হন্যে হয়ে নামে পুলিশ। রেখা ঘনঘন তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। সর্বশেষ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রেখাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানা গেছে।

জেইউ/এসএম