তুরাগ পাড়ে হবে সেন্তোসা আইল্যান্ড থেকেও সুন্দর শহর
♦ চলছে প্রকল্প তৈরির কাজ
♦ প্রকল্প এলাকা হবে সাড়ে ৯ হাজার একর
♦ থাকবে ৬২ ভাগ জলাশয়
♦ প্রত্যেকটি আইল্যান্ড হবে স্বতন্ত্র
♦ বাস্তবায়ন করতে লাগবে কয়েক বছর
তুরাগ নদের পাড়ে নতুন শহর গড়তে যাচ্ছে সরকার, তাও আবার সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা আইল্যান্ডের আদলে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে, নতুন এ শহর হবে সিঙ্গাপুরের ওই আইল্যান্ড থেকেও সুন্দর। থাকবে ৬২ ভাগ জলাশয় (ওয়াটার বডি) আর বাকিটা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এতে একদিকে যেমন পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে, অন্যদিকে রাজধানীর ওপর থেকেও কমবে বাড়তি মানুষের চাপ।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) অংশ হিসেবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।তুরাগের আশপাশের সাড়ে ৯ হাজার একর জমি নিয়ে এ শহর গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প তৈরির কাজ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আগামী দুই মাসের মধ্যেই এ প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ হবে।
ড্যাপের পরিচালক ও রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ প্রকল্প নিয়ে আমরা কাজ করছি। চূড়ান্ত করার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তখন মন্ত্রণালয় এটি অনুমোদন করবে। এরপর প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, সাড়ে ৯ হাজার একর জমি নিয়ে এ শহর গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ শহরে ছোট-ছোট আইল্যান্ড তৈরি করা হবে। যা হবে খুব দৃষ্টিনন্দন। একটি আইল্যান্ড আরেকটি আইল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে না। দুবাই, সিঙ্গাপুর বা উন্নত কিছু শহরে গেলে যেমন দেখা যায়, সেই আদলেই এ শহর গড়ে তোলা হবে। আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই আমরা প্রকল্পের খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।
এ প্রকল্প ঘিরে একটি পরিকল্পিত নগরীর প্রত্যাশা করছে সরকার। যা বাস্তবায়ন করতে লাগবে দীর্ঘ সময়। প্রকল্প অনুমোদনের সময়ই বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।
ড্যাপ চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তুরাগ তীরকে কেন্দ্র করে একটি মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সেখানে নতুন শহর গড়া নিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। সে প্রকল্প নিয়েই আমরা আগানোর চেষ্টা করছি।
যদি এটা বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আমার কাছে মনে হয় সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা আইল্যান্ড থেকেও আরও সুন্দর একটি নগরী হবে। কারণ, এখানে ৬২ ভাগ ওয়াটার বডি থাকবে। যা সেখানকার সৌন্দর্যকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দেবে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা প্রত্যাশা করছি, আধুনিক একটি শহর হবে এটি।
তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
কতদিনের ভেতরে এ শহর গড়ে তোলা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে কয়েক বছর সময়তো লাগবেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। পর্যালোচনা শেষে জানা যাবে কবে নাগাদ এ শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
নতুন এ শহর গড়া হলে সেটি যাতে শুধুমাত্র ধনীদের শহর না হয়, সরকারকে সেদিকে নজর রাখতে বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন, এ শহর নিয়ে ব্যবসায়িক চিন্তা করা যাবে না। আর সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরটি গড়ে তোলা সম্ভব হলে ঢাকা থেকে মানুষের চাপ কিছুটা হলেও কমবে। এতেকরে কমবে যানজটও।
স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন শহর নিয়ে সরকার এর আগেও উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে। তাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সাম্যতার ভিত্তিতে এ শহর গড়তে হবে। যেখানে শুধু ধনীরা না, মধ্যবিত্ত ও গরীবরাও স্থান পাবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন, সরকারকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে ব্যবসায়িক হিসাব করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, এ শহর এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে নাগরিকরা তাদের সব কাজ সেখানেই করতে পারেন। একটা কাজের জন্য তাকে যেন ঢাকায় না আসতে হয়। অর্থাৎ সেখানে নাগরিকদের সব সুযোগ-সুবিধা ও উপকরণ নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে মানুষ ঢাকামুখী কম হবে। আর সেজন্য ঢাকার যানজট কিছুটা হলেও কমবে।
এসএইচআর/এসএম