টিকায় আগ্রহ বাড়ছে, ৮ দিনে নিবন্ধন দেড় লাখ
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সমালোচকদের বিভিন্ন গুজব, অপপ্রচারেও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, টিকা পেতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেড় লাখ মানুষ নিবন্ধিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মহাখালী জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ক্যানসার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যারা নিবন্ধন করতে পারবে না তাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সহযোগিতা করবে। এছাড়াও সারাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য মাইকিং, জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধকরাসহ গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জোরলো প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হবে, এজন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন এখন দ্রুত বাড়ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ৭০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে, পর্যায়ক্রমে সব দেওয়া হবে। ক্রয় করা তিন কোটি টিকা এবছর দেওয়া হবে, এছাড়া কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি টিকা পাওয়া যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে করোনার ভ্যাকসিন আনতে পারেনি, সেখানে আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি।
বিজ্ঞাপন
জাহিদ মালেক বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকে আজেবাজে কথা বলে। যারা গুজব ছড়ায় তারা দেশের মানুষের ভালো চায় না। এটা আমরা করতেও দেব না। আমরা সারা বছর ভ্যাকসিন নেব, করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
যারা দেশের মঙ্গল চায় না, তারা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বিদেশে বসে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা সজাগ আছি, কোনো ষড়যন্ত্র কাজ হবে না। দেশের মানুষ সচেতন, মানুষ উন্নয়ন চায়। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আট বিভাগে ক্যানসার হাসপাতাল করা হচ্ছে। যার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। হাসপাতাল তৈরি হলে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হবে না। চালু হলে আরও এক হাজার বেড যুক্ত হবে।
সংক্রমক রোগ কমেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, করোনায় বহু লোক মারা যেত, যদি ভালো স্যানিটেশন ব্যবস্থা না হত। এখন সংক্রমক রোগ কমছে, কিন্তু অসংক্রমক রোগ বাড়ছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড চালু হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কম। জিডিপির ১ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় হচ্ছে। পঞ্চম পরিকল্পনা বার্ষিকীতে ২ শতাংশ বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যানসার সারা বিশ্বের জন্য দূরারোগ্য ব্যাধি। সারা বিশ্বে প্রতি বছর এক কোটি মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশেও তার চিত্র ভালো নয়। প্রতিবছর এক লাখ মানুষ মারা যায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যসেবায় পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি ভ্যাকসিন হিরো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ক্যানসার পৃথিবীতে সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাধি। প্রতিবছর ১৯ মিলিয়ন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়। ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যান। ক্যানসার রোগী বাড়ছে, বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। ওষুধ রপ্তানি করে যে আয় হয়, এর চেয়ে বেশি অর্থ ক্যানসার চিকিৎসায় বিদেশে চলে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশীদ আলম বলেন, ক্যানসার নির্ণয়ে স্কিনিং মেশিন বাড়ানো দরকার। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
দেশে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি (রোববার) করোনার টিকাদান শুরু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এমপি-মন্ত্রীসহ জনপ্রতিনিধিরা টিকা নেবেন, এছাড়া মন্ত্রীরা যার যার এলাকা থেকে টিকা নিতে পারেন অথবা রাজধানীর মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারে তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হোক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা।
টিআই/জেডএস