ডিএমপি উত্তরা বিভাগের সংবাদ সম্মেলন

রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে জিসান হাবিব (১৮) হত্যা মামলায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে সেই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের আটক ও তাদের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘ঘাতক ছিনতাইকারী চক্রটি উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে ছিনতাই করে। ছিনতাইকারীর চক্রের কোনো একজন সদস্য যখন ধরা পড়ে, চক্রের অন্য ৩-৪ জন সদস্য ‘মুরুব্বী সেজে’ ঘটনাস্থলে আসে এবং ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে ভাই’ ইত্যাদি কথা বলে আটক ছিনতাইকারীকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। অনেক সময় ছাড়িয়ে নিতে সক্ষমও হন তারা।’

ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত জিসান হত্যার ঘটনার বিষয়ে ডিসি বলেন, ‘জিসান নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। গত ২৮ নভেম্বর (শনিবার) সে নোয়াখালী থেকে ধামরাইয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর (বুধবার) রাতে সে তার এক আত্মীয়কে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে যায়।’

বিমানবন্দর থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জিসান তার অপর এক আত্মীয়ের সঙ্গে বাসে করে ধামরাই ফিরছিল। বাসটি উত্তরার আবদুল্লাপুরে পৌঁছালে এক ছিনতাইকারী জানালা দিয়ে জিসানের মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় জিসান ও সঙ্গে থাকা আত্মীয় বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। একপর্যায়ে জিসানকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত ছিনতাইকারী। ছুরিকাঘাতের পর জিসানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সুন্দরী সুমন, স্বপন, মো. বিপ্লব, তৈয়ব আলী ওরফে উজ্জল ওরফে তবলা ওরফে বাবলা, মো. জাহাঙ্গীর ব্যাপারী ওরফে হৃদয়, মো. তানভীর রহমান নেহাল, মো. জিহাদ, নূরুল ইসলাম রাব্বি ও মো. রাকিব।

ডিসি বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গত ১২ ডিসেম্বর (শনিবার) উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে সুন্দরী সুমন ও স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে আদালতের আদেশে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদীর রায়পুরা থানার বাঘাইকান্দী চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত মো. বিপ্লব ও তৈয়ব আলীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত মো. জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, মো. তানভীর রহমান নেহাল, মো. জিহাদ, নূরুল ইসলাম রাব্বি ও মো. রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরাসহ পলাতক অভিযুক্ত কবির ও নাতি সোহাগ আব্দুল্লাহপুরসহ উত্তরা এলাকায় ছিনতাই করেন। ঘটনার দিন জিসানের মোবাইল ছিনতাই করে পালানোর সময় জিসান ও তার আত্মীয় রুহুল বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারী হৃদয়কে ধরে ফেললে দলের গ্রেফতারকৃত অন্য সদস্যরা হৃদয়কে ছাড়ানোর জন্য ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় ছিনতাইকারীরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে জিসান ও রুহুল আমিনকে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।’

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা একত্রে টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ছিনতাই করে থাকেন। দলের একটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে পাহারা দেন- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য আশপাশে আসছে কি না। গ্রুপের কোনো একজন ধরা পড়লে গ্রুপের অন্য ৩-৪ জন সদস্য মুরুব্বী সেজে ঘটনাস্থলে আসে এবং ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে ভাই’ ইত্যাদি কথা বলে আটক ছিনতাইকারীকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।’

জড়িত ছিনতাইকারী চক্রটির প্রায় সকল সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চুরি, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এআর/টিএম/এফআর