ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ। নেপালের মাটিতে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়েছে বাংলাদেশ। আমি প্রথমেই তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই নারী দল তার আগে ভারত, পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকেও হারিয়েছে। যেখানে খেলায় টাইব্রেকার হয় সেই জায়গায় বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলই দাঁড়াতে পারেনি। তাদের গতির কাছে হার মেনেছে। এই অর্জন আনন্দের। বিজয়ের। গর্বের।

নারী দলকে প্রান্তিক থেকে উঠিয়ে এনে খেলানোর পেছনে যে কারিগর গোলাম রব্বানী ছোটন এবং ম্যানেজার মালা রানী সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেয়েরা আমাদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দিয়েছে। মেয়েদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল দেখেই তারা সেই বিশ্বাসের পূর্ণ মর্যাদা দিতে পেরেছে। তাই তাদের কথা বিশেষভাবে না বললেই না।

এই হচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল। যে ইতিহাস ছিল গৌরবের। আনন্দের। তখন বাংলাদেশ ফুটবল দলকে মানুষ আলাদাভাবে চিনতো। অন্যকোনো দল বাংলাদেশ দলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারতো না।

আরও পড়ুন : সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ : পুরুষতন্ত্রকেও হারাতে হয়েছে নারী ফুটবলারদের 

সেইসময় কায়সার হামিদ, সত্যজিৎ দাশ রুপুরা ছিল আমাদের ফুটবল তারকা। তারা হেসে খেলে ভুটান দলকে ৭/৮টা গোল দিত। সেই ফুটবল এখন কোথায়? নিচে নামতে নামতে কোথায় যে নেমেছে তা কেউই বলতে পারবে না।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর নারী ফুটবলারদের নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। এখন অনেকেই ছুটে আসছে তাদের সাহায্য করতে, সহযোগিতা করতে। আমার প্রশ্ন, এরা এতদিন কোথায় ছিল?

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর নারী ফুটবলারদের নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। এখন অনেকেই ছুটে আসছে তাদের সাহায্য করতে, সহযোগিতা করতে। আমার প্রশ্ন, এরা এতদিন কোথায় ছিল?

গোলরক্ষক রুপনা চাকমা যে বাড়িতে থেকে এই পর্যন্ত এসেছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। তার মানসিক শক্তিকে আমি সম্মান করি। একটা ভাঙা বাড়িতে ছিল তাদের আবাস। বাফুফে কি জানতো না এই ঘটনা? জানলেও কেন ব্যবস্থা নেয়নি? বাফুফের দায় এড়ানো আর কতদিন?

২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আমরা জানছি রুপনা চাকমার বাড়ি ভয়ংকর বিধ্বস্ত, কৃষ্ণার পরিবারের অর্থকষ্ট তাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। আমরা কেন এতদিন এদের গল্প জানলাম না? বাফুফের নেতার তাহলে কী করেছে? আজ যারা ছবি তোলার জন্য সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে তারা এতদিন কোথায় ছিল? বাফুফের আসলেই কি ফুটবলের প্রতি প্রেম আছে?

করোনার সময় আমি ফুটবল একাডেমি করি। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার তাগিদ থেকে এই কাজ করি। আমি দেখেছি, ফুটবলের প্রতি মানুষের আবেগ কত বেশি। শুধুমাত্র সদিচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।

আরও পড়ুন : নারী ক্রিকেটার : ৫০০ টাকার ম্যাচ ফি থেকে আজ বিশ্বকাপে! 

বর্তমানে যারা নেতৃত্বে আছে তারা কি আদৌ যোগ্য? কাজী সালাউদ্দিন—আব্দুস সালাম মুর্শেদী যাদের আমরা যোগ্য ভাবছি তারা কি তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে এত বছরে? আমার বক্তব্য সরল, এরা পুরোপুরি ব্যর্থ নেতৃত্ব। তারা থাকলে বাংলাদেশ ফুটবল আরও পিছিয়ে যাবে। ছেলেদের ফুটবল এরা ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে।

এদের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধিতা নেই। বাংলাদেশের ফুটবলের সার্বিক স্বার্থে আমি তাদের নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করছি। ফুটবলের স্বার্থে এই নেতৃত্বের পরিবর্তন জরুরি। যদি তারা সফলই হতো তাহলে বাংলাদেশের ফুটবলের এত দুর্গতি হতো না। ফুটবল নিয়ে এত বদনাম হতো না।

২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল আমাদের মেয়েরা। সেই সময় ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের মেয়েদের বাসে করে বাড়ি পাঠিয়েছিল এই বাফুফে।

আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ফুটবলকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে এই নেতৃত্ব। এদের বাদ না দিলে বাংলাদেশের ফুটবল কখনো আলোর মুখ দেখবে না।

আজকে মেয়েরা নিজের যোগ্যতায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে দেখেই তাদের নিয়ে এত উল্লাস। যদি তারা না জিততো তাহলে কাজী সালাউদ্দিন এত বড় বড় কথা কখনোই বলতো না। বলার সুযোগও ছিল না।

২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল আমাদের মেয়েরা। সেই সময় ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের মেয়েদের বাসে করে বাড়ি পাঠিয়েছিল এই বাফুফে। তখন কাজী সালাউদ্দিন—আব্দুস সালাম মুর্শেদীই কিন্তু নেতৃত্বে ছিল। সেই সময় তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় তারা।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানপ্রেমী বাংলাদেশি! 

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী মেয়েরা নিজেদের একক প্রচেষ্টায় এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাদের স্ট্যাটাস দেখলেই এই সত্য টের পাওয়া যায়। কখনো অর্থকষ্ট, কখনো সমাজের টিপ্পনী, কখনো ক্ষুধার কষ্ট নিয়ে আমাদের মেয়েরা এতদূর এসেছে। তারা সত্যিকার অর্থেই ফুটবলকে ভালোবেসেছে। তাদের এই ভালোবাসায় খাঁদ নেই।

আমরা যে সক্ষম তা কিন্তু এই মেয়েরাই প্রমাণ করে দিয়েছে। এখন উচিত তাদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা। অযোগ্য নেতৃত্ব বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বে বাংলাদেশ ফুটবল এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। ২০২৬ সালে আমাদের যেন শুনতে না হয় আরও একজন রুপনা চাকমার বাড়ি ভয়ংকর বিধ্বস্ত, আরও একজন কৃষ্ণার পরিবার অর্থকষ্টে আছে।

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ।। আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট