ছবি : মোহসীন-উল হাকিম

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাইনছড়ি সীমান্ত। ২০১৭ সালের মে মাস। সীমান্ত পিলার পাহারা দেওয়ার সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন বিজিবির নায়েক মিজান। পরদিন লেম্বুছড়ি বিওপি-তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়।

পরের দিন সকালে নিহত মিজানের মরদেহ আনতে যায় বিজিবির একটি দল। সেই পথেও বিজিবিকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে মিয়ানমারের সৈনিকেরা। ফিরে আসে বিজিবি। বিকেলে প্রস্তুতি নিয়ে আবারও রওনা দেন তারা। সশস্ত্র অভিযানের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনা হয় নিহত মিজানের মরদেহ।

২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় ঘটে আরেকটি অঘটন। টেকনাফের নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে দায়িত্ব পালন করছিলেন বিজিবি সদস্য নায়েক রাজ্জাক। জালিয়ার দ্বীপ এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনার মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয় নায়েক রাজ্জাককে।

আরও পড়ুন : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বাস্তবতা

মিয়ানমারের সীমান্ত রীতি লঙ্ঘনের এই দু’টি ঘটনার পরপরই গণমাধ্যকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম আমি। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেখেছি পুরো ঘটনা। সংবাদ করেছি, তার চেয়ে বেশি জানার চেষ্টা করেছি আসলে কী হচ্ছে, কী চাচ্ছে মিয়ানমার।

এর আগে ২০১২ সালের জুন মাসে একবার ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা ছিল। নাফ সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার মানুষ নৌকা-ট্রলার যোগে ঢুকে পড়েছিল বাংলাদেশের সীমান্তে। তখন বাংলাদেশ কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করতে দেয়নি।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া শেষ দু’টি ট্রলারের ফিরে যাওয়াও দেখেছিলাম নিজের চোখে। নিপীড়িত সেই মানুষদের চোখে-মুখে দেখেছিলাম আতঙ্ক-অসহায়ত্ব। মানুষ হিসেবে মন খারাপ হলেও কিছু করার ছিল না। কারণ তখন একজন রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করলে নামতো অনুপ্রবেশের ঢল। এর আগে ও পরে রাতে গোপনে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে ধরে এসেছে রোহিঙ্গারা।

স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের সহযোগিতায় ঘটতো সেই অনুপ্রবেশ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ঘটে যায় বড় বিপর্যয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেই দেশের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতনে ঘর ছাড়ে রোহিঙ্গারা। এমন ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করেছিল তারা যাতে সেদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সবাই বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।

এক সময় এই সীমান্তের একটি বড় অংশ ছিল অরক্ষিত। ধাপে ধাপে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি’র অবস্থান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মজবুত, সুসংহত।

ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল দেশের ভেতরে। মানবিক বিবেচনায় তখন আমাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। আট লাখ মিয়ানমার নাগরিক নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ বছর পেরিয়েছে। সবরকম চেষ্টা করেও তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়নি এখনো। মিয়ানমার সরকারের অনীহার কারণেই বিষয়টি ঝুলে আছে এখনো।

অনীহা’ শব্দটি মাত্র তিন অক্ষরের। কিন্তু এই ক্ষেত্রে এই শব্দটির কারণেই বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের সীমান্ত অঞ্চল অস্থির। বাংলাদেশের উপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে।

তুমব্রু সীমান্তের ওপাশ। শিলেরকূল বিজিপি ক্যাম্প; ছবি : মোহসীন-উল হাকিম 

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২৭০ কিলোমিটার। উত্তরে রাঙ্গামাটির ধোপানীছড়া থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত দুর্গম পাহাড়, তারপর নাফ নদী ও সর্বশেষ দক্ষিণে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সাগর সীমান্ত। পুরো সীমান্তই চ্যালেঞ্জিং।

এক সময় এই সীমান্তের একটি বড় অংশ ছিল অরক্ষিত। ধাপে ধাপে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি’র অবস্থান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মজবুত, সুসংহত।

আরও পড়ুন : সীমান্ত সংকট ও মিয়ানমারের সামরিকায়ন : কী করছে বিশ্ব? 

বিজিবি সদস্য নায়েক মিজান হত্যা, নায়েক রাজ্জাককে অপহরণের ঘটনাগুলো ঘটেছিল বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে। সীমান্ত রীতি লঙ্ঘনের অভ্যাস দেশটির পুরনো।

তবে সীমান্ত জুড়ে সাম্প্রতিক গোলাগুলি আর সংঘর্ষের সঙ্গে আগের ঘটনাগুলো মিলছে না। এই দফায় সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ২০২২ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সীমান্ত বেশ অস্থির। ঘটছে নানা ঘটনা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি। রাখাইন রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হচ্ছে তারা।

সম্প্রতি রাখাইনের মাইয়ু নদীর পাশে বাউলি বাজার অবস্থিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়ন দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। সেখান থেকে লুট করেছে অস্ত্র। ৩২৫ ব্যাটেলিয়নের অবস্থান ভৌগলিক কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটি ফেরি ঘাট রয়েছে।

নদী ও সড়ক পথ বিবেচনায় কৌশলগত কারণে এই সেনা ক্যাম্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সেনা ক্যাম্প বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে বেশি দূরে নয়। এছাড়া এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শক্তি অর্জন করে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি।

একের পর এক তারা দখল করছে দেশটির সেনা-বিজিপি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকা। সেই সংঘর্ষ কখনো কখনো ঘটছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু-ঘুমদুম অঞ্চলের সীমান্তে দেড় মাস ধরে চলছে গোলাগুলি। মর্টারসহ আর্টিলারি শেল-এর বিকট শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো এলাকা। সীমান্তের ওপাশের সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ অংশেও।

আরও পড়ুন : সীমান্তে গোলাবর্ষণ, রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসী দল ও আমাদের করণীয়

শুরু থেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। একটু দেরিতে হলেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত ঘুরে এসেছি। কাজ করেছি সেই অঞ্চলে। ছিলাম এক সপ্তাহ। শুরুতে নিজের মতো করেই ঘুরেছি তুমব্রু, ঘুমধুম, রেজুপাড়াসহ ওই অঞ্চলের শূন্য রেখা ধরে। সাধারণ মানুষের বেশে সেখানে প্রবেশ করেছিলাম। কক্সবাজার থেকে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার ও পায়ে হেঁটে খবর সংগ্রহ করেছি। মাঠের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে হলে এই কৌশল খুব কার্যকর।

সীমান্তে কি আসলেই যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে? আমার অনুসন্ধানের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ছিল সেটি। সেখানে অবস্থান কালে থেমে থেমে মর্টারের শব্দ শুনেছি। যার সবগুলোই সীমান্তের ওপাশে ঘটছিল।

সীমান্তে কি আসলেই যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে? আমার অনুসন্ধানের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ছিল সেটি। সেখানে অবস্থান কালে থেমে থেমে মর্টারের শব্দ শুনেছি....

দেড় মাস ধরে চলছে সেই সংঘর্ষ। দেশের অভ্যন্তরে হলেও বাংলাদেশের তুমব্রু থেকে খুব কাছেই সংঘর্ষগুলো হচ্ছে। তুমব্রু বাজার সংলগ্ন শূন্য রেখা। তার ওপাশেই মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র বিওপি। ছোট্ট একটি টিলার ঢালে তার অবস্থান। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পোস্ট হলেও সেখানে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এই বিওপি থেকেই ক্ষণে ক্ষণে মর্টারের গোলা ছোঁড়া হচ্ছে। সেই শব্দ আতঙ্কিত করেছে বাংলাদেশের সীমান্তের বাসিন্দাদের।

আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষের আঁচ বাংলাদেশেও পড়েছে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে রাতের বেলা সেই আতঙ্ক বেড়ে যায়। জিরো লাইনের বাসিন্দারা রাত জেগে থাকেন। যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিরাপদ এলাকায় যেতে পারেন।

জিনিসপত্র গুছিয়ে তারা ২৪ ঘণ্টা সতর্ক অবস্থায় আছেন। যদিও বেশ কিছুদিনের গোলার শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন স্থানীয়রা। এই বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, দেশের ভেতরের চলমান সংঘর্ষ নিয়ে সেই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনো।

আরও পড়ুন : রোহিঙ্গা : কূটনীতির সুফল মিলবে কবে? 

সীমান্ত রীতি লঙ্ঘন করে মিয়ানমারের ছোঁড়া মর্টার শেলগুলোর টার্গেট যে বাংলাদেশ নয় তা নিশ্চিত। চেয়ারম্যান জানালেন, বিজিবি’র শক্ত অবস্থান সেখানে আছে। এছাড়া প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছেন সেখানকার সাধারণ মানুষও।

তাহলে কি বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই? সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজেছি কয়েকদিন ধরে। মাঝে জিরো লাইনে অবস্থিত কোনাপাড়া রোহিঙ্গা বসতিতে দুটি মর্টার এসে পড়েছে। একজন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক সেই ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে দুটি শেল পড়লেও বিস্ফোরণ না ঘটায় কেউ হতাহত হননি।

মিয়ানমারের সীমান্তের ভেতরে একজন বাংলাদেশি নাগরিক মাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছেন। তবে ঘটনাটি সীমান্তের ওপাশেই ঘটেছিল। গরু আনতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া কয়েকদিন পরপর সীমান্তে সেই দেশের যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টারের উপস্থিতি আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন।

তুমব্রুর উত্তর পাড়া সীমান্ত; ছবি : মোহসীন-উল হাকিম 

কখনো তা নিয়ম লঙ্ঘন করে সীমান্তের এপাশেও চলে এসেছে। তবে দিন যত যাচ্ছে তাদের রীতি লঙ্ঘনের ঘটনা কমে আসছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্বশীলরা জানালেন, সীমান্ত রীতি লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে প্রতিপক্ষ বিজিপি’র সঙ্গে। অন্যদিকে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনাও চলছে এই বিষয়ে।

সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের অঞ্চল পরিবর্তিত হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের পশ্চিম অঞ্চল অর্থাৎ বাংলাদেশ সীমান্ত ধরে সংঘর্ষ কমে এসেছে। অপেক্ষাকৃত পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ রাখাইনের মংডু, বুচিডংসহ দেশের ভেতরের দিকে ও চিন রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা দখলের চেষ্টা করছে আরাকান আর্মি।

বিদ্রোহী সংগঠন জানিয়েছে যে, রাখাইনের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল দখলে নিয়েছে তারা। পুরো রাজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মির সাংগঠনিক অবস্থা, সামরিক শক্তি নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না...

এরই মধ্যে বিদ্রোহী সংগঠন জানিয়েছে যে, রাখাইনের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল দখলে নিয়েছে তারা। পুরো রাজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মির সাংগঠনিক অবস্থা, সামরিক শক্তি নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে দেড় মাস ধরে চলা এই সংঘর্ষ এখনো চলছে যা তাদের সামরিক সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের সেনাবাহিনী আরাকান আর্মিকে দমন করার চেষ্টা করছে। পাহাড়ি, দুর্গম ও জনশূন্য সেই অঞ্চলে গেরিলা যোদ্ধাদের মোকাবিলা করতে হিমশিমও খাচ্ছে তারা। তবে পূর্ণ শক্তি দিয়ে সেই কাজটি করছে বলে মনে হচ্ছে না।

কয়েকদিনে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরেছি। স্থানীয়রাও বলছেন, আতঙ্কের মধ্যে দিন রাত কাটছে তাদের। বিশেষ করে জিরো লাইনের সঙ্গে বসবাসকারীদের জন্য সেই আতঙ্ক ২৪ ঘণ্টার। সীমান্তের ওপাশে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ হচ্ছে। সেই খবর আসছে এপাশেও। কিন্তু তাদের বন্দুকের নল যে বাংলাদেশের দিকে নয় তা বোঝা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : আরসা’র অস্তিত্ব ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা 

সবদিক থেকে খবর নিয়ে যেটুকু বুঝেছি—বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনো। পরিস্থিতি এখনো সীমান্ত সংকটের মধ্যেই আছে। আর তা মোকাবিলার জন্য বিজিবি যথেষ্ট। তবে কখনো যে যুদ্ধ পরিস্থিতি হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। প্রস্তুতি নেওয়া আছে সবদিক থেকে। কিন্তু এই দফায় কোনো উসকানির ফাঁদে পা দেবে না বাংলাদেশ।

দায়িত্বশীলরা বলছেন, সীমান্তের ওপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের যোগাযোগও চলছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ আর বিশৃঙ্খলার সুযোগ কেউ নিতে পারে সেই সম্ভাবনা থেকেই যায়। বিশেষ করে নতুন করে অনুপ্রবেশের ঘটনা যদি ঘটানোর অপচেষ্টা থাকে তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবে বাংলাদেশ।

শীর্ষ পর্যায় থেকে সেই নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন দায়িত্বশীলরা। তবে সাংবাদিক হিসেবে সীমান্ত অঞ্চল ঘুরে আমার মনে হয়েছে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার আর্মির মধ্যকার সংঘর্ষের লক্ষ্য বাংলাদেশ নয়। তবে এই বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে আমাদের। রাখতে হবে খোঁজখবর। কারণ মিয়ানমার সীমান্তের অস্থিরতা সহসা কাটবে না।

মোহসীন-উল হাকিম ।। বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন