ছবি : সংগৃহীত

ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু হওয়া মাধ্যমিক ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষা সংগঠিত করা প্রয়োজন। তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ, মানোন্নয়ন, পরিচালনা, তত্ত্বাবধান—দেখভাল করে বোর্ড।

প্রধান ও বড় দু'টো পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি ও এইচএসসি নেওয়াও প্রধান কাজ। হালের জেএসসিও। প্রশ্নপত্র তৈরি, বিতরণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ, পরীক্ষা নেওয়া, নকল প্রতিরোধ, খাতা কাটা, ফলাফল দেওয়া—বিশাল কর্মযজ্ঞ। সবই করে শিক্ষা বোর্ড।

সেই প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ব বাংলায় একমাত্র ঢাকা বোর্ড। ৬০ বছর আগে ১৯৬২ সালে চার বিভাগে চারটা বোর্ড হলো। বিকেন্দ্রীকরণ। ঢাকা থাকল ঢাকা বিভাগে। পৃথক হলো রাজশাহী, বিভাগীয় হেডকোয়ার্টারেই। খুলনা বিভাগেরটা হলো যশোরে আর চট্টগ্রাম বিভাগেরটা কুমিল্লায় এলো।

আরও পড়ুন : সৃজনশীল ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা কেন জরুরি?

দক্ষিণের কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৫ জেলার তখনকার চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা সনদ ছিল কুমিল্লা বোর্ডের।

আর তাই গৌরব ও ঐতিহ্যের ষাটতম বছর—হীরকজয়ন্তী পালন করল কুমিল্লা বোর্ড। অনাড়ম্বর আনন্দর‍্যালির মধ্য দিয়ে। দুই নভেম্বর। জন্মযাত্রার শুভক্ষণে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগে কাজ শুরু। এরপর সরকারি সাড়ে পাঁচ একর জমিতে স্থায়ী নিবাস—যা আজকের শিক্ষা বোর্ড অফিস।

এরমধ্যে ১৯৯৬ সালে পাঁচ জেলা নিয়ে চট্টগ্রাম আর ২০০১ সালে আরও চার জেলা নিয়ে সিলেট পৃথক হয়। বাকি ছয় জেলা—বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী নিয়ে আপাতত কুমিল্লা বোর্ড।

শুরুতে ৫৩২টি স্কুল আর ২৭টি কলেজ ছিল। অর্জন—এখন ১,৯৬৫টি স্কুল আর কলেজ ৪২৬টি। ১৯৬৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এসএসসি দিয়েছে ৩৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬৭। আর এইচএসসি দিয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৫ শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন : শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ 

শিক্ষা কার্যক্রমে বছরে ছয় লাখ মানষকে সেবা দেয় বোর্ড। এসবই তাদের গৌরব ও ঐতিহ্য। ছয় দশকে অর্জনই বেশি। ব্যর্থতা মাঝেমধ্যে পিছু টানলেও বীরত্বেই সামলে নিয়েছে বোর্ড। এটাই সাফল্য।

বয়স বেড়েছে। অভিজ্ঞতার ঝুলি বড় হয়েছে। সিস্টেম দাঁড়িয়ে গেছে। জনবলে দুর্বল হয়ে এখন সংকটাপন্ন বলা চলে। না হলে ২১৯ এরমধ্যে ৬৯ জন দিয়ে কীভাবে সামলে নিচ্ছে সব। এটা একাধারে দক্ষতার অন্যদিকে আশ্চর্যেরও।

শুধু একারণেই ৬০-এ এসে একটা বিশেষ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্যতায় আছে বোর্ড। বুড়ো হলেও নুইয়ে পড়েনি। বিশাল বাড়ি অনেকটাই ফাঁকা। তার ওপর ১৯৮৪ সালের পর থেকে নিয়োগ বন্ধ। স্থানীয় স্বার্থে মামলা জটিলতায় বন্ধ রয়েছে নিয়োগ।

তবে নতুন চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে বলেছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এটাও ৬০-এর বছরে আশাজাগানিয়া খবর। দেশের ১০টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ ১৩টি বোর্ডই ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে অনেক দিন হলো।

এরপরও হয়রানি কমেনি সেই হারে। তবে শিক্ষায় জালিয়াতি কমেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনৈতিক আধিপত্য থাকায় নৈরাজ্য কমানো যাচ্ছে না। এখন এক ধরনের শৃঙ্খলা চলছে কাজ চালাতে।

আরও পড়ুন : মাধ্যমিকে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পাঠ : চ্যালেঞ্জ ও করণীয় 

বোর্ডের কথা উঠলেই পুরোনো বাস্তবতার গল্প ভেসে ওঠে। ৬০-এর অভিজ্ঞতাও অনেক। কাজে লাগিয়ে এসব জট আরও সহজ করা যায় কি না ভাবনায় থাকুক। সিস্টেম—নিয়ম মানুষের জন্য হলে সহজ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর নিয়মের জন্যে মানুষ হলে এখন যা হচ্ছে তাই—জটিল, পেরেশানি। সবটা বোর্ডের হাতেও নেই। দেশেই গলদ।

কুমিল্লা বোর্ড-এর কথাটা যখন নোয়াখালীর কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কেউ বলে তখন কুমিল্লাবাসীর একটা ভালো লাগা-অহংবোধ জাগে। এটাই গৌরবের। আর এই যে দিন চলে গেল সফলতার ৬০ বছর এটাই ঐতিহ্য।

জয় হোক কুমিল্লা বোর্ডের—অনন্তকালের ধারায়।