কানাডা প্রতিবছর লাখ লাখ বিদেশি ছাত্রকে সেদেশে লেখাপড়ার সুযোগ দিচ্ছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে কানাডার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট ভিসা বা স্টাডি পারমিটের আবেদনে সফলতার হার মাত্র তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ, যা খুবই কম। যথাযথ কাগজপত্র ও উন্নতমানের সাবমিশন লেটার সংযুক্ত করে ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি) বা অভিবাসন পরামর্শকগণ আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে একজন ছাত্রের স্টাডি পারমিট অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন, তবে কোনোভাবেই আবেদন অনুমোদনের বিষয় নিশ্চিত করতে পারেন না। কেননা, আবেদন অনুমোদন দেওয়া হবে কি না সে সিদ্ধান্ত কানাডার ভিসা অফিসারের হাতে, ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টের হাতে নয়। এ কারণেই আমার কোম্পানি, ‘এমএলজি কানাডা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস’ ভিসা প্রসেসিংয়ের আবেদন সফল হয়ে যাবে এমন এখতিয়ার বহির্ভূত আশ্বাস কখনোই ক্লায়েন্টকে দেয় না। তবে, এ পর্যন্ত স্টাডি পারমিটের আবেদনে আমাদের কোম্পানির সফলতার হার প্রায় আশি শতাংশ, যা বাংলাদেশের এভারেজ বা গড়ের প্রায় দ্বিগুণ।

স্টাডি পারমিটের আবেদন দাখিলের জন্য কনসালটেন্টের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি নয়। দেশ বিদেশে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই নিজ উদ্যোগে আবেদন দাখিল করে সফল হচ্ছে। যথেষ্ট কনফিডেন্ট বা আত্মবিশ্বাসী হলে একজন ছাত্র নিজেই আবেদন দাখিল করতে পারেন। তবে, আবেদনের প্রক্রিয়া, ডকুমেন্ট প্রস্তুতি, সাবমিশন ইত্যাদি নিয়ে কোনোরকম সন্দেহ থাকলে ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে কনসালটেন্টের সহায়তা অবশ্যই নেওয়া উচিত।

আবেদন অনুমোদন দেওয়া হবে কি না সে সিদ্ধান্ত কানাডার ভিসা অফিসারের হাতে, ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টের হাতে নয়।

কনসালটেন্ট নিয়োগের শুরুতেই আপনাকে দেখতে হবে যাকে কনসালটেন্ট হিসেবে আপনি মানছেন তিনি বাস্তবে কানাডার অনুমোদিত কনসালটেন্ট কি না। কেননা, কানাডার ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট হওয়ার লাইসেন্স কানাডা সরকারকেই দিতে হয়, বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের সরকার বা প্রতিষ্ঠান তা দিতে পারে না। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের একজন দক্ষ আইনজীবী কানাডায় আইন ব্যবসা করতে গেলে প্রথমেই তাকে কানাডার আইনজীবী হিসেবে প্রফেশনাল লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। একই কথা খাটে ডাক্তার বা অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রে। ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টও ভিন্ন কিছু নয়।

কোনো ব্যক্তি নিজেকে কানাডার অনুমোদিত কনসালটেন্ট হিসেবে পরিচয় দিলে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যেই তা নিশ্চিত হতে পারেন। এ কাজে আপনাকে এই লিংকটি ব্যবহার করতে হবে। ওই ব্যক্তির লাস্ট নেইম বা নামের শেষাংশ ইংরেজিতে টাইপ করে সার্চ দিলেই আপনি কানাডার পাবলিক রেজিস্টারে তার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেখবেন। এ তালিকায় নাম খুঁজে না পেলে ওই তথাকথিত কনসালটেন্টকে আপনার কাজে ব্যবহার না করাই উত্তম।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাতে আগ্রহীরা একজন কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টকে তাৎক্ষণিক শনাক্ত করতে পারেন সে লক্ষ্যে কানাডার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এ সাইটটি তৈরি করেছে। মনে রাখা জরুরি, কোনো কারণে আপনার স্টাডি পারমিটের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তা নিয়ে কানাডার প্রতিষ্ঠান আইআরসিসি’র সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন একমাত্র কানাডা সরকারের অনুমোদিত পরামর্শকগণ। অননুমোদিত কোনো তথাকথিত পরামর্শকের সাথে আইআরসিসি বা অফিশিয়াল করেসপন্ডেন্স যোগাযোগ করে না। তাই, আপনার কনসালটেন্ট বাস্তবেই কানাডার অনুমোদিত কি না তা শুরুতে নিশ্চিত করা আপনার নিজ স্বার্থেই দরকার।

নিজে নিজে কানাডার স্টাডি পারমিটের আবেদন করতে হলে শুরুতেই আপনার যা করা উচিত তা হলো, সিআইসি ওয়েবসাইটে গিয়ে ভালোভাবে আবেদনের নিয়মকানুনগুলো পড়ে নেওয়া। একইসাথে আপনাকে ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট, রেগুলেশনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোও ভালোভাবে পড়তে হবে। এ বিষয়ে কোনো প্রকার মিনিস্টারিয়াল ইন্সট্রাকশন বা লেটেস্ট আপডেট থাকলে তাও জেনে নিতে হবে। নিয়মাবলী যথাযথভাবে না জেনে আবেদন পূরণে হাত দিলে আপনি সঠিক জায়গায় সঠিক তথ্যটি হয়তো ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন না। মনে রাখবেন, যথেষ্ট সাবধানে আবেদন দাখিলের পরও স্টাডি পারমিটের আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে। তবে, যথাযথ আইনি ব্যাখ্যা ও ডকুমেন্ট সহকারে পুনরায় আবেদন দাখিল করলে অনেকক্ষেত্রে পূর্বে প্রত্যাখ্যাত আবেদন নতুনভাবে অনুমোদিত হয়ে যায়।

স্টাডি পারমিটের আবেদন দাখিলের জন্য কনসালটেন্টের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি নয়। দেশ বিদেশে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই নিজ উদ্যোগে আবেদন দাখিল করে সফল হচ্ছে।

স্টাডি পারমিটের আবেদন দাখিলের সময় যাতে মিসরি প্রেজেন্টেশনের মতো গুরুতর কিছু না ঘটে তা নিয়ে শুরুতেই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, মিসরি প্রেজেন্টেশনের কারণে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তা পুনরায় আবেদনের মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। এমনকি, মিসরি প্রেজেন্টেশনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য কানাডায় প্রবেশের অযোগ্যও বিবেচিত হতে পারেন, কানাডায় পড়াশোনা তো আরও দূরের কথা।

এ পর্যায়ে মিসরি প্রেজেন্টেশন বলতে কী বোঝায় তা একটু খুলে বলা দরকার। মিসরি প্রেজেন্টেশন মানে হলো, স্টাডি পারমিট বা অন্য যেকোনো প্রকারের ইমিগ্রেশন আবেদনে স্বেচ্ছায় ভুল তথ্য দেওয়া বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করা। যেমন ধরুন, আপনি বেশ কয়েক বছর আগে কানাডা বা অন্য কোনো দেশে ভিসার আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, কিন্তু স্টাডি পারমিটের আবেদনে সে তথ্য গোপন করেছেন বা এমনও হতে পারে, বাস্তবে আপনি বিবাহিত, কিন্তু আবেদনে লিখেছেন অবিবাহিত; সন্তান আছে, অথচ আবেদনে লিখেছেন নেই; ইত্যাদি।

স্টাডি পারমিট অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়াতে ভুয়া কনসালটেন্টরা অনেকসময় তাদের ক্লায়েন্টকে এ জাতীয় তথ্য গোপন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং কোনো কোনো আবেদনকারী সরল বিশ্বাসে এসব অনৈতিক পরামর্শ গ্রহণও করে থাকেন। কিন্তু এই ভুলের মাশুল শেষ পর্যন্ত দিতে হয় আবেদনকারীকেই। এমন অনেক ঘটনা আমরা দেখেছি। অন্যের পরামর্শে ভুল হয়েছে বলে মিসরি প্রেজেন্টেশনের সাজা হতে মাফ পাওয়া যায় না।

কানাডায় স্টাডি পারমিট বা স্টুডেন্ট ভিসায় প্রথমবার সফল না হলে কানাডায় পড়াশোনার পরিকল্পনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। মিসরি প্রেজেন্টেশন ছাড়া অন্য কোনো কারণে স্টাডি পারমিটের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তা পুনরায় আবেদন অর্থাৎ রিসাবমিশনের মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংশোধন করে নেওয়া যায়। তবে, রিসাবমিশনের ক্ষেত্রে কানাডার অনুমোদিত কোনো অভিজ্ঞ কনসালটেন্টের সহায়তা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এর কারণ হলো, রিসাবমিশন পর্যায়ে যথেষ্ট লিগ্যাল/আইনি রিসার্চ করতে হয় এবং নতুন ফাইল যথেষ্ট পেশাদারিভাবে উপস্থাপন করতে হয়।

একজন অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন প্রফেশনাল এ কাজটি যথাযথভাবে করতে পারেন কেননা, তাদের এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এলোমেলোভাবে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে একটা প্রফেশনাল সাবমিশন করা সহজ নয়। তাছাড়া, একবার নিজে নিজে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর আবারও নিজে নিজে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। বারবার প্রত্যাখ্যান হলে দেখতেও খারাপ দেখায়।

কানাডার স্টাডি পারমিটের আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে আপনি হয় রিসাবমিট (নতুন আবেদন) করতে পারেন বা জুডিশিয়াল রিভিউ’র জন্য কানাডার ফেডারেল কোর্টে আবেদন জানাতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা আপনার জন্য সমীচীন হবে তা নির্ভর করছে আপনার মূল আবেদনটি কীভাবে দাখিল করেছেন তার উপর।

আপনি যদি মনে করেন কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রথম আবেদনে উপস্থাপন করা হয়নি যা এবার উপস্থাপন করবেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে রিসাবমিশনের কথা ভাবতে হবে। কারণ, জুডিশিয়াল রিভিউ’তে নতুন তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। অপরদিকে, আপনি যদি মনে করেন তথ্য যা দেওয়ার তা আপনি প্রথম আবেদনে দিয়ে ফেলেছেন, এখন শুধু আপনার আবেদনের এসেসমেন্ট ত্রুটিহীন, ফেয়ার বা ন্যায়সঙ্গত হয়েছে কি না তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে চান, তাহলে আপনাকে জুডিশিয়াল রিভিউ’র কথা ভাবতে হবে। জুডিশিয়াল রিভিউ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাধ্য বলে বেশিরভাগ প্রার্থীই প্রথমে রিসাবমিশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে থাকেন। তাতেও কাজ না হলে তবে জুডিশিয়াল রিভিউ বিবেচনা করেন।

পরিশেষে বলা যায়, স্বল্প পরিসরে হলেও কানাডায় স্টাডি পারমিটের আবেদন নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠকদের জানাতে পেরেছি।

এম এল গনি ।। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি) 
info@mlgimmigration.com