ছবি : সংগৃহীত

যা হওয়ার তাই হবে, কী এসে যায়? ইচ্ছে হলো হঠাৎ নিজেকে ভালোবাসতে, যা ইচ্ছে তাই করতে মন চায় যখন-তখন। এমন প্রায়ই হয়। কোনো কোনো দিন মন কেমন করে রঞ্জনার জন্যে। জীবনে একটু বাঁচার জন্যে আপস করতে করতে মনে পড়ে যায় কত হরিপদ, ম্যারি অ্যান বা বেলার জন্য।

আমার শৈশবের কলোনির জন্যে মন পুড়ে। সেখানে কোনো জানালা বা বারান্দায় কেউ এখনো একজন আছে, সে অপেক্ষায় এখনো আমার। ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়, সেই পাড়ায় আমারও। বয়স বাড়ছে আমারও। চিনি বাড়ছে শরীরে, চোখ চালশে, কমছে জীবন, তাই গলার জোর বাড়িয়ে নিচ্ছি। কেমন যেন নিজেকে বেতার মনে হয়। ভ্রাম্যমাণ রেডিও জকি হয়ে ঘুরছি। এসব কিছুই কেমন যেন জেরক্স মনে হচ্ছিল। কেন, কারো সঙ্গে কি জীবনের ভাবনা চিত্র মিলে যাচ্ছে? একদম দুজন মানুষের সঙ্গে জীবন উপভোগের স্বাদ কেমন করে যেন মিলে মিশে গেছে।

একজন সুমন চট্টোপাধ্যায়, অন্যজন অঞ্জন দত্ত। আমার জানালা দিয়ে দেখা দেয়ালে যে রোদ্দুর এসে ভিড় করে। ওদের জানালাতেও তাই। আমাদের তিনজনের পৃথিবী কখনোই ধূসর নয়, রঙিন। আমরা পরিবর্তনকে হজম করতে পারি। কিন্তু চিন্তায় যে আমরা সহোদর সেই কথা তো তাদের বলা হয় না। সুযোগ কই?

অঞ্জন দত্ত ঢাকা এলেন। প্রথম দেখা। কিন্তু মনে হচ্ছিল তার সঙ্গে অনেক কাজ করেছি আমরা। দীর্ঘদিনের সহকর্মী যেন। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে উড়ে গেলেন তিনি।

সুযোগ এলো। ফেলে আসা সময়ের সুর, চলতি সময়ের সঙ্গে যায় কি মিলিয়ে দেওয়া? দেখি না একটু দুষ্টুমি করে। ব্যস শুরু করে দেই সামনে আসা যাওয়া করা মানুষের মন শহরে উঁকি দেওয়া। যার স্বরলিপি হয়ে উঠল ‘মনবাকসো’। চিত্রনাট্য তৈরি করে ভাবলাম-কাকে দেওয়া যায় পরিচালকের দায়িত্ব?

বিশেষ করে কেন্দ্রীয় চরিত্র যে বাবা, সেই বাবা খুঁজে পাব কোথায়। মেয়ের ভালোবাসায় নিমজ্জিত কবির নিজের জীবনে যেমন প্রেম আছে, তেমনি মেয়ের প্রেম, ভালোবাসার প্রতিও শ্রদ্ধা, উদারতা এবং শাসন, তিনই আছে। এমন বাবা খুঁজতে গিয়ে বারবার সামনে এসে নানা ভঙ্গিমায় দাঁড়াচ্ছিলেন অঞ্জন দত্ত। কিন্তু তিনি কি এই হাফ পেন্সিল টাইপের লেখকের চিত্রনাট্যের চরিত্র হবেন?

তার নম্বর জোগাড় হলো। ফোনে ১৫/২০ শব্দে যতটুকু বলা যায়, সেভাবে প্রস্তাব রাখলাম। মেইল করার ঠিকানা পাওয়া মাত্রই পাঠিয়ে দেই। তারপর অপেক্ষা। তিনি নিজের ছবি, পরের ছবি নিয়ে ব্যস্ত। ফোন কখনো ধরেন। কখনো ধরেন না। অনিশ্চয়তা যেমন বাড়ে, তেমনি বাড়ে জেদ। ছবি তাকে নিয়েই হবে। তিনিই হবেন পরিচালক।

মাস দুয়েক পর জানালেন-চিত্রনাট্য পছন্দ হয়েছে। গাছে উঠে লাফানোর জন্যে ঢাকার গাছগুলোকে তখন আমাদের বড্ড নিচু মনে হচ্ছিল। ছবিটি আমাদের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান-‘মাধ্যম’ থেকে তৈরির সিদ্ধান্ত হলো। যদিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তিন কর্ণধার আমি, কাকলী প্রধান ও আকতার বাবুর পকেট শূন্য। 

অঞ্জন দত্তকে সেই সময়ে সহজভাবে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে দেখেছি। তিনি আমাকে বললেন, মানুষকে না দেখলে গান হবে কী করে? শব্দ আসবে কোথা থেকে।

অঞ্জন দত্ত ঢাকা এলেন। প্রথম দফায় এসেছিলেন দেশ টিভির ঈদ অনুষ্ঠানে। আমরা অনুষ্ঠানের পরদিন ঢাকা ক্লাবে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি। প্রথম দেখা। কিন্তু মনে হচ্ছিল তার সঙ্গে অনেক কাজ করেছি আমরা। দীর্ঘদিনের সহকর্মী যেন। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে উড়ে গেলেন তিনি। ফিরে এলেন মাস দুয়েক পর।

সেই বার আমরা সংবাদ সম্মেলন করি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। তিনি বললেন-ষাট বছর বয়সে মিথ্যে বলছেন না। সত্যি মনবাকসো গল্পটি তার জীবনেরই চিত্রনাট্য। আমরা সেই বার সিলেট গিয়ে শুটিং স্পট ঘুরে দেখি।

অঞ্জন দত্তকে সেই সময়ে সহজভাবে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে দেখেছি। তিনি আমাকে বললেন, মানুষকে না দেখলে গান হবে কী করে? শব্দ আসবে কোথা থেকে।

মোটামুটি শুটিংয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে তিনি কলকাতা ফিরে যান। যাওয়ার আগে ঠিক হয় মনবাকসে তার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন বিদ্যা সিনহা মিম। আরও বেশ কয়েকজন অন্যান্য চরিত্রে কাজ করার জন্যে দেখা করেছিলেন তার সঙ্গে। কাউকে তার পছন্দ হয়েছে, কাউকে হয়নি। 

মনবাকসের শুটিং শুরুর আগে গানের কাজ শেষ করতে চেয়েছি। তাই আমি উড়ে যাই কলকাতায়। তার বাড়িতে বসেই গান সুর তৈরি করছিলেন নীল দত্ত। বাবা-ছেলে সুর ভাজতে গিয়ে যেখানে যেখানে শব্দের বদল দরকার মনে করছিলেন, আমি বদলে দেই।
ছবিটি এখনো অসম্পূর্ণ। আমরা শেষ করতে পারিনি আইনগত রকমারি ঝামেলায়। ঝামেলা আমাদের দিকে। কবে এর মীমাংসা হবে জানি না। কিন্তু একটি ছবি করার জন্য আপস করতে ইচ্ছে করে না।

অঞ্জন দত্তকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পরিচালক করার মতো আপসের শক্তি নেই। তাই চলছে অপেক্ষা...। অঞ্জন দত্তকে নিয়ে আসব ফিরে দর্শকের শোবার ঘর, বসার ঘর কিংবা মুঠোফোনে জানাব—মনবাকসের মন শহরের কথা।

অঞ্জন দা, কততে পৌঁছলেন এবার? চলেতো যেতে হবেই একদিন, তবুও চলুন ফিরে আসি, আসি ফিরে মনবাকসে!

তুষার আবদুল্লাহ ।। গণমাধ্যমকর্মী