সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

সিরাজগঞ্জের শহীদগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী কাউন্সিলর তরিকুল ইসলামকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, তার হত্যার বিচার দাবিতে সিরাজগঞ্জ যখন উত্তাল তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরাসরি খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ‘কাউন্সিলর হত্যা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র।’

নিহত নির্বাচিত কাউন্সিলর যেহেতু বিএনপির নেতা, তাই তার কাছে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তরিকুলের হত্যাকারী প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বুদ্দিন বাহিনীকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। 

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।

প্রসঙ্গত, ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিন খুন হন তরিকুল ইসলাম। নির্বাচনে তিনি শহীদগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রিজভী বলেন, শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ কতটা নৃশংস হতে পারে এটা তার প্রমাণ। এদের মনে কোনও অনুশোচনা নেই। যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের ফাঁড়া কাটবে না।

রিজভীর দাবি, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বহু কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে নৌকা ছাড়া কোনও প্রতীক রাখেনি। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দেখে যে, ভোট শুধু নৌকায় পড়ছে। পৌর নির্বাচনে ভোটের ফলাফল সরকার দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘোষণা করা হয়েছে। আর আমাদের নেতাকর্মীদের হয় কারাগারে নয় এলাকাছাড়া করা হয়েছে।

‘পৌরসভা নির্বাচনে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে’- ইসি সচিব মো. আলমগীরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, কত বড় বেহায়া ও সরকারের কাছে আত্মা বিক্রি করলে এমন নগদ মিথ্যা বলা যায়। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। অথচ সিইসি নুরুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিশন, সে কমিশনের অধীনে আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বসুরহাট পৌরসভায় মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিজয়ে ভাই ওবায়দুল কাদের খুশিতে গদগদ হয়ে বলেছেন, বসুরহাটে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা নাকি স্বচ্ছতার মডেল। প্রধানমন্ত্রীও নাকি ‘বসুরহাট’ মডেল নির্বাচন চান। তার এই মন্তব্যে একটি প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেলো, ‘পাগলের সুখ মনে মনে, পাতা টোকায় আর টেকা গোনে।’ রকিবুল হুদা কিংবা নুরুল হুদা চক্র গত এক দশক ধরেই বেহুদা নির্বাচনের মাধ্যমে যে নানারকম নির্বাচনী মডেল জন্ম দিয়েছেন তা জনগণের স্মৃতি থেকে এখনো মুছে যায়নি। কখনো ‘নির্বাচন ছাড়াই ১৫৪ এমপি’ আবার কখনো ‘ভোট ছাড়াই নিশিরাতের এমপি’ এসব মডেলের পর এবার বেহুদা কমিশনের লেটেস্ট আবিষ্কার ‘বসুরহাট মডেল’।

রিজভী আরও বলেন, বসুরহাটের মডেলে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রশংসায় ভাসিয়ে দেবে আবার নিজেরাই নিজেদের বিরোধিতায় মেতে উঠবে। এমন বিরোধিতা যাতে একদিকে গণমাধমকে ব্যস্ত রাখা যায়। অন্যদিকে নির্বাচন নামের প্রহসনকে আলোচনায় রাখা যায়।

নির্বাচন কমিশন স্রেফ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্ট বক্স বলে উল্লেখ করে রিজভী বলেন,  ইসির কাজ আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে পাঠানো তালিকা প্রকাশ করা। এ খেলার মাস্টার মাইন্ড প্রধানমন্ত্রী আর খেলোয়াড় হিসাবে আছে পুলিশ প্রশাসন। নির্লজ্জ রেফারি নির্বাচন কমিশন এখানে হাতের পুতুল।


এএইচআর/ওএফ