ক্যামব্রিজ সেন্ট্রাল মসজিদ

যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজকে মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর হিসেবে চেনে। বিখ্যাত সব মানুষদের পদচারণায় মুখরিত এই শহর। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জানে না এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। এই শহরের প্রাচীন সব স্থাপত্যের মাঝে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে নতুন একটি স্থাপনা। ক্যামব্রিজে যা ইতোমধ্যেই পর্যটকদের কাছে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। নান্দনিক সেই স্থাপনার নাম ক্যামব্রিজ সেন্ট্রাল মসজিদ। শতভাগ পরিবেশবান্ধব উপায়ে নির্মিত এই মসজিদ চমৎকার স্থাপত্যশিল্প হিসেবে সুপরিচিত।

পরিবেশবান্ধব নির্মাণ হওয়ায় এতে ব্যবহৃত উপকরণ থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্য। এ মসজিদে দিনে বিদ্যুত ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কারণ এখানে প্রাকৃতিকভাবেই আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের ছাদে বৃষ্টির পানি প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হয়েছে। ফলে ভেতরের অংশে বেশ ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। এখানে নামাজের সময় বিশেষ প্রশান্তির কথাও জানায় দর্শনার্থীরা।

রাতের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হলেও, তা চলে সোলার প্যানেলের সাহায্যে। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ-জ্বালানি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান থেকে। নির্মাণকাজের শুরু থেকেই মসজিদটির সবক্ষেত্রে পরিবেশগত দিকটি অনুসরণ করা হয়েছে। ইটের পিলারের বদলে নির্মাণে ১৬টি গাছের কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশপথেই পানির ফোয়ারা স্থাপন করা হয়েছে। উপরের অংশ সম্পূর্ণ বাঁশ, কাঠ ও মার্বেলের তৈরি। ভেতর বাইরের চমৎকার এই নকশা মসজিদের সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ড. টিমোথি উইন্টার। ২০০৮ সালে এ মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০০৯ সালে ক্যামব্রিজের মিল রোডে প্রায় চার মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে মসজিদের জন্য এক একর জমি কেনা হয়। এরপর প্রায় আট বছরের গবেষণা ও তহবিল সংগ্রহ শেষে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

মসজিদের নকশা করেছেন লন্ডনের প্রখ্যাত ইকো স্থাপত্যশিল্পী মার্ক বারফিল্ড। যিনি লন্ডন আইয়েরও স্থাপত্যশিল্পী। এছাড়াও মসজিদ চত্বরের সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করেন বিখ্যাত শিল্পী ইম্মা ক্লার্ক। ইতোমধ্যেই তাদের এই স্থাপত্য বিশেষ নজর কেড়েছে। পরিবেশসম্মত স্থাপনা তাও আবার ধর্মীয় উপাসনালয়, ধারণাটি অনেকের কাছে বেশ আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

মসজিদটির মোট নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২৩ মিলিয়ন পাউন্ড। যার দুই তৃতীয়াংশ অর্থই এসেছে তুরস্কভিত্তিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে। এ মসজিদে একসাথে এক হাজার মানুষ একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রায় তিন বছরের নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৯ সালের মার্চে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান মসজিদের উদ্বোধন করেন।

বর্তমানে সারাবিশ্ব থেকে ক্যামব্রিজে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে মসজিদটি একটি বাড়তি আগ্রহ যোগ করেছে। মসজিদ পরিদর্শনের সময় অনেকেই ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মসজিদ পরিদর্শনের সময় তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেন। এজন্য মসজিদের নিজস্ব ট্যুর গাইড রয়েছে। যারা মসজিদের চারপাশে ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি এর নির্মাণ ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকেন। দর্শনার্থীদের জানতে চাওয়া অনেক প্রশ্নের উত্তর দেন।

ক্যামব্রিজ সেন্ট্রাল মসজিদের বর্তমানে দুই জন ইমাম রয়েছেন। প্রধান ঈমাম হাফিজ ড. শেজাদ মেকিস আর হাফিজ আলী তোস। মসজিদে সভা, সেমিনারের জন্য একটি কনফারেন্স হল রয়েছে। পুরুষদের নামাজ আদায় করার মূল জায়গার পাশেই নারীদের নামাজ আদায়ের স্থান। মসজিদে প্রবেশের ডান দিকে ছোট একটি ক্যাফে রয়েছে। সেখানে পর্যটকরা নামাজ শেষে খানিক বিশ্রাম নিতে পারেন। এছাড়াও বাচ্চাদের জন্য খেলার জায়গা ছাড়াও রয়েছে প্রশিক্ষণের বিশেষ স্থান।

মসজিদটি ক্যামব্রিজের মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি একটি সুবিধা বলা চলে। তাদের নামাজ আদায় করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী তাদের উচ্ছ্বাসের কথা জানান। সময়ের সঙ্গে মসজিদটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্থাপনার স্বীকৃতি পাবে বলে আশা করা যায়। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ শহরে নির্মিত ইকো ফ্রেন্ডলি মসজিদ নির্মাণের এই ধারণাটি কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে পরিবেশসম্মত মসজিদ নির্মাণে এগিয়ে আসতে পারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

ওএফ