অটোরিকশা থেকে বিএমডব্লিউ: সিরাজের ‘অম্লমধুর’ স্বপ্নপূরণের গল্প
এমন কিছু অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেও হওয়ার কথা ছিলো সিরাজের জন্য। কিন্তু হয়নি। হবে কী করে? বাবা মোহাম্মদ গাউস যে এখন কেবলই স্মৃতি! /ছবি: সংগৃহীত
সদ্যপ্রয়াত বাবা মোহাম্মদ গাউস পেশায় ছিলেন অটো রিকশাচালক। ছেলের অনুশীলনে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন দিতেন সত্তর রূপি করে, স্বপ্ন ছিল ছেলে মোহাম্মদ সিরাজকে দেখবেন ভারতের জার্সিতে। মোহাম্মদ গাউসের সে স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে বটে, নিজে ততক্ষণে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবে স্বপ্নপূরণের পর বাবার কাছে কবরের পাশে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন সিরাজ। করেছেন নিজের স্বপ্নপূরণও, নিজেকে উপহার দিয়েছেন একটি বিএমডব্লিউ সেডান!
দুবাই হয়ে ভারত তখন সবে পা রেখেছে অস্ট্রেলিয়ায়। দলের সঙ্গে আছেন মোহাম্মদ সিরাজও। দলে ডাক পেয়েছেন, আছে অভিষেকের হাতছানি। তবে তা ঢেকে আছে কিছুটা শঙ্কার মেঘে। বুমরাহ-শামি-উমেশদের মতো বিশ্বমানের পেসারদের ভিড়ে অভিষেক হবে তো? এমনই সময় শুনলেন দুঃসংবাদ, সিরাজের সাদা পোশাক গায়ে চড়ানোর স্বপ্নদ্রষ্টা বাবা মোহাম্মদ গাউস আর বেঁচে নেই।
বিজ্ঞাপন
কোয়ারেন্টিন নীতিমালার চোখরাঙানি ছিল। বাবাকে শেষ বারের মতো দেখতে ভারতে ফিরে এলে শঙ্কা ছিল সিরিজ থেকেই ছিটকে যাওয়ার। সেটা হলে যে বাবার স্বপ্নটাও সত্যি হতো না! সিরাজ তাই সিদ্ধান্ত নিলেন থেকে যাওয়ার।
ভারতীয় দলে বাবা-মাকে হারানোর পরপরই ম্যাচে নামার নজির আছে বেশুমার। সবচেয়ে বিখ্যাত দুই ইতিহাস আছে শচীন টেন্ডুলকার আর বিরাট কোহলির। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের মাঝামাঝিতে বাবাকে হারানো টেন্ডুলকার দেশে ফিরে বাবার শেষকৃত্য করেই ফিরেছিলেন বিলেতে, রানের বন্যাও বইয়ে দিয়েছিলেন টুর্নামেন্টের বাকি অংশে। কোহলি খেলছিলেন কর্নাটকার বিপক্ষে এক ম্যাচ, এরই মাঝে বাবার মৃত্যুর খবরটা পান। তবু ইনিংস চালিয়ে যান, যা শেষমেশ দিল্লিকে নিশ্চিত হারের কবল থেকে বাঁচায়।
বিজ্ঞাপন
তবে সিরাজের ব্যাপারটা ছিল আলাদা। টেন্ডুলকার-কোহলি কিংবা ভারতীয় ক্রিকেটের বাকি সব বাবা হারানো খেলোয়াড়রা শেষবারের মতো বাবাকে দেখতে পেয়েছেন। সিরাজ বড় করে দেখেছেন সদ্যপ্রয়াত বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নকে।
ভাগ্যিস বড় করে দেখেছিলেন! মোহাম্মদ শামির চোটে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে সুযোগ পেয়ে তুলে নিয়েছেন দলের সিরিজসেরা ১৩ উইকেট। দলের অবিস্মরণীয় ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে কাজ করেছেন বড় কুশীলব হিসেবে। ভারতে ফিরে এলে কি তেমনটা হতো?
হায়দ্রাবাদে ফিরে ঘরে ঢোকার আগেই সিরাজের গন্তব্য হলো বাবার কবরে। বিমানবন্দর থেকে বাবার পাশে গিয়ে বসলেন বটে, কথা হলো না।
আমি বাসায় যাইনি। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে গিয়েছিলাম বাবার কবরে। বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ বসেছিলাম। কথা বলতে পারিনি, তবে তার কবরে কিছু ফুল দিয়ে এসেছি।
মোহাম্মদ সিরাজ, ভারতীয় পেসার
ঘরে ফিরে মায়ের কান্নামাখা অভিব্যক্তি আবারও আবেগে সিক্ত করেছে সিরাজকে, ‘যখন মাকে দেখলাম, তিনি কাঁদতে শুরু করেছিলেন। আমি তাকে কাঁদতে বারণ করেছিলাম, এটা ভিন্ন এক অনুভূতি ছিল। প্রায় ছয়-সাত মাস পর ছেলেকে দেখছিলেন তিনি। আমার ফেরার জন্য সবসময়ই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি, আমার ফেরার জন্য দিন গুণছিলেন।’
বাবা অটোচালক ছিলেন। সেই বাবাকে নিজের অর্থে কেনা বিএমডব্লিউ সেডানেও হয়তো চড়াতে চেয়েছিলেন সিরাজ। বাবার স্বপ্ন, নিজের টেস্ট জার্সি গায়ে চড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তবে বাবাকে নিজ গাড়িতে চড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। জীবন তো এমন অম্লমধুরই!
এনইউ/এটি