উত্তেজনার ম্যাচে আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালে বসুন্ধরা
ছবি : বাফুফে
টানা তৃতীয়বারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠল বসুন্ধরা কিংস। দুই বিদেশি আর্জেন্টিনার রাউল অস্কার বেসেরার একটি এবং ব্রাজিলের জোনাথন দ্য সিলভেইরার দু’গোলে জিতল তারা। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত উত্তেজনায় ভরপুর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পিছিয়ে পড়েও ৩-১ গোলে আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে অস্কার ব্রুজন শিষ্যরা।
নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানেই জয়ের দেখা পায় বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচের ১১০ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের আনন্দে মেতে ওঠে বসুন্ধরা। ডান প্রান্ত দিয়ে বদলি মিডফিল্ডার মতিন মিয়ার মাইনাসে বল খুঁজে নেন রাউল অস্কার বেসেরা। বল থামিয়ে ঠান্ডা মাথায় প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান এই আর্জেন্টাইন। এবারের ফেডারেশন কাপে বেসেরার এটি চতুর্থ গোল।
বিজ্ঞাপন
ম্যাচের অন্তিম সময়ে নাবীব নেওয়াজ জীবন গোল করলেও লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তুলে দেন। বাতিল হয়ে যায় গোল। তাতেই লাইন্সম্যানের দিকে তেড়ে যান আবাহনীর ফুটবলাররা। গ্যালারি থেকে আবাহনীর সমর্থকরা বোতল ছুঁড়তে থাকেন মাঠে।
ম্যাচে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খেলা প্রায় ১০ মিনিট বন্ধ থাকে। রেফারির সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে খেলতে অস্বীকৃতি জানান আবাহনীর বেলফোর্ট। কয়েকবার বল মাঠের বাইরে ফেলে দেন। তা দেখে রেফারি হাইতির এ ফরোয়ার্ডকে হলুদ কার্ড দেখান। শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের অনুরোধে খেলতে রাজি হন বেলফোর্ট।
এই ঝামেলার পর ম্যাচ শুরু হলে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয় বসুন্ধরা কিংস। পাল্টা আক্রমনে তৃতীয় গোল পায় বসুন্ধরা। বক্সের মধ্যে ঢুকে ব্রাজিলিয়ান রবসনের মাইনাসে ডান পায়ের শটে গোল করেন সেই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোনাথন দ্য সিলভেইরা। ম্যাচে যেটি তার দ্বিতীয় গোল। একটু পর রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ফাইনালে ওঠার আনন্দে মেতে ওঠে বসুন্ধরা।
বিজ্ঞাপন
ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট পর্যন্ত আগ্রাসী ছিল বসুন্ধরা কিংস। কিন্তু এরপরেই ঝিমিয়ে পড়ে তারা। বিপরীতে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ঢাকা আবাহনী। এতেই বাজিমাত। ৩০ মিনিটে গোলের দেখা পায় তারা। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে ফের আক্রমণ শানিয়ে সফলতা পায় বসুন্ধরা কিংস। শেষে ম্যাচও জিতে নেয় তারা। ম্যাচে ১২০ মিনিটে দুই দল চার গোল করে। সবগুলোই এসেছে বিদেশিদের পা থেকে।
প্রথম ২০ মিনিট পর্যন্ত একচ্ছিত্র আধিপত্য ছিল বসুন্ধরা কিংসের। বল বেশির ভাগ সময় ছিলো আবাহনীর সীমানায়। এরমধ্যে কয়েকটি কর্ণারও আদায় করে নেয় টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তবে ২০ মিনিটে পরেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা আবাহনী গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে।
ডান প্রান্ত দিয়ে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগাস্তোর ফ্রি কিকে বেলফোর্ট লাফিয়ে ওঠে হেড করলেও তা চলে যায় কিংসের গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোর হাতে। খেলার ধারার বিপরীতে ৩১ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় আকাশী হলুদ শিবিরই। কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করেন আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফ্রান্সিকো দি সৌসা ফিলবো।
সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে ডান পায়ে ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ফেডারেশন কাপের এবারের আসরে প্রথম গোল হজম করে বসুন্ধরা কিংস।
২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপের মতো মারামারি না হলেও মাঝে মধ্যে ধাক্কা ধাক্কি হয়েছে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। সেই উত্তাপের কিছুটা দেখে গেছে এদিনও। ৫১ মিনিটে সমতায় ফেরে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া ব্রাজিলিয়ান জোনাথন দ্য সিলভেইরা আবাহনীর তিনজনকে কাটিয়ে আচমকা উড়ন্ত শট নিলে তা ক্রসবারে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে।
আর্জেন্টনাইন রাউল অস্কার বেসেরা হেডের মাধ্যমে বল জালে জড়ান। তবে জোনাথনের শটেই বল জালে জড়ায় বলে গোলটি তার নামে দেয়া হয়। ৭০ মিনিটে আবাহনীর জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসে আফগান ডিফেন্ডার সাইঘানির ইনজুরির খবর। পায়ে ব্যথা পাওয়ায় তাকে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে বের করে নেয়া হয়।
মাসির পরিবর্তে তখন মাঠে নামেন মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম মামুন। সাইঘানি ওঠে যাওয়ার পর নাসির উদ্দিন চৌধুরী নিচে নেমে খেলেন। পাঁচ মিনিট পর রায়হান হাসানের বদলে নামেন ওয়ালি ফয়সাল। ম্যাচের ইনজুরির সময়ে ফ্রান্সিসকোর নিখুঁত ক্রসে শুয়ে হেড করেন হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট কারভেন্স। কিন্তু বল পোস্টের কাছ ঘেষে বাইরে চলে যায়।
এজেড /এমএইচ