আজ সোমবার বিকেলে ডাগ আউটে অস্কার ব্রুজন ও সত্যজিৎ দাশ রুপু দুই জন থাকবেন দুই পাশে। বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনীর ম্যাচের পর আগামী দুই মাস তারা আবার বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে জুটি বাঁধবেন। গত তিন বছর দুই জন ছিলেন দুই জনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ঘটনাচক্রে আগামী দুই মাস দু'জন হবেন একে অন্যের পরিপূরক। 

জাতীয় দলের হেড কোচ জেমি ডে'কে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন জেমি ডে'র উপর খুবই নাখোশ ছিলেন। ফলে জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ জেমি ডে'কে বদল করতে অনেকটা বাধ্যই হয়েছেন সভাপতির দাবি রাখতে। জেমির পদচ্যুতিতেই মূলত জাতীয় দলে বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনীর জুটি গড়ে উঠছে ডাগআউটে। 

গত এক দশকে জাতীয় দলের ম্যানেজার দায়িত্ব পালন করাদের মধ্যে যোগ্যতা, সামর্থ্যের বিচারে সত্যজিৎ দাশ রুপু সবচেয়ে যোগ্য। রুপু একই সঙ্গে আবাহনী ক্লাবের ম্যানেজার এজন্য ফুটবলাঙ্গনের একটি পক্ষের প্রচন্ড আপত্তি ছিল এক সময় তার জাতীয় দলের ম্যানেজার পদ নিয়ে। সালাউদ্দিনও এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে পেশাদার ম্যানেজার নিয়োগের কথা বলেছিলেন। জেমি ডে'কে সরানোর জন্য সালাউদ্দিন এতটাই মরিয়া ছিলেন ফলে নিজের পেশাদার ম্যানেজার নিয়োগের বিষয়টি উপেক্ষা করে গত এক দশকে ম্যানেজারের পারফরম্যান্স বিবেচনায় রুপুকে আবার দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব দেন। ফুটবলাঙ্গনে নাবিলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি রুপু ফলে স্বাভাবিকভাবে তিনিও এর পক্ষে মতামত দেন এবং জাতীয় দল কমিটিতেও রুপুর নাম অনুমোদিত হয়। 

বসুন্ধরা কিংস অস্কার ব্রুজনকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিতে রাজি হয়েছে। যতটুকু জানা গেছে, বসুন্ধরা কিংস থেকেই অস্কারের বেতন দেওয়ার কথা হয়েছিল। যেহেতু তার সঙ্গে কিংসের চুক্তি ডিসেম্বর পর্যন্ত। বসুন্ধরা কিংস কর্তৃপক্ষ ম্যানেজারের বিষয়টি তারা আগে জানতেন না। আবার রুপু জাতীয় দলের ম্যানেজার হওয়ায় কিংস খানিকটা নাখোশই বলে ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা। রুপু জাতীয় দলের দায়িত্ব পেলেও আগামী দুই মাস দলবদল চলাকালীন সময় আবাহনী দল গঠনের কাজও করবেন একই সঙ্গে। এখানে খেলোয়াড়দের কিছুটা প্রভাবিত করার শঙ্কা দেখলেও কিংস বিষয়টি সেভাবে প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বাফুফেরও সহ-সভাপতি। 

ইমরুল হাসান বসুন্ধরা কিংসের সভাপতির পাশাপাশি বাফুফেরও সহ-সভাপতি। বাফুফে সহ-সভাপতি হলেও এই গত এক বছর তার কর্মকাণ্ড ও ভুমিকা কিংসের সভাপতি হিসেবেই ছিল বেশি। বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভায় অনুপস্থিতও থাকেন মাঝে মধ্যে আবার কিংস-ফেডারেশন বিষয়ে সভাপতি হিসেবে নিজেই ফেডারেশনকে দেয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। 

অন্যদিকে আবাহনীরও অনেকটা চাপা অভিযোগ ও ক্ষোভ বসুন্ধরা কিংসের উপর। প্রিমিয়ার লিগে ১৩ টি ক্লাবের মধ্যে সাতটি ক্লাবের মালিকানা ও পৃষ্ঠপোষকতায় বসুন্ধরা। আসন্ন মৌসুমে দু'একজন খেলোয়াড় টাকা পেলেও তারা সঠিকভাবে জানেন না কোথায় খেলবেন।  এই বিষয়গুলো নিয়ে দুই ক্লাবের দ্বান্দ্বিক অবস্থান গত দুই বছর থেকে। আগামী মৌসুমে বসুন্ধরা হ্যাটট্রিক শিরোপার সুযোগ অন্য দিকে আবাহনীর শিরোপা ফিরে পাওয়ার লড়াই। আগামী দুই মাস দলবদলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এই সময়ে দুই ক্লাব অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে থাকবে। 

এমন সময় জাতীয় দলে আবাহনী-বসুন্ধরা জুটি কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে না তো? অস্কার ব্রুজন কোনো বক্তব্য না দিলেও রুপু এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবার আগে ও সবার ঊর্ধ্বে দেশ। জাতীয় দলে দেশের পতাকা আমাদের বুকে থাকবে।’

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রায় প্রতিটি খেলায় ক্ষমতা ও প্রভাবের দ্বন্দ্ব প্রায় দৃশ্যমান। গত তিন বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে সেই প্রভাব ও ক্ষমতার স্নায়ুযুদ্ধর খেলা চলছে আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের মধ্যে। পেশাদার ফুটবল লিগ প্রচলনের পর আবাহনী সব সময় বড় ও স্থায়ী শক্তি। ২০১৮ সালে বসুন্ধরা কিংস প্রিমিয়ারে আসার পর আবাহনীর সেই শক্তি খর্ব হয়েছে। ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপ ছাড়া আবাহনীর গত তিন বছরে কোন ট্রফি নেই। বসুন্ধরার একচেটিয়া প্রাধান্য। জেমি ডে'র আকস্মিক দায়িত্ব অব্যাহতিতে দেশের ফুটবলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ভারসাম্য ফুটে উঠল ভিন্নভাবে।

এজেড/এটি